জুলাই অভ্যুত্থানে সংশ্লিষ্ট ৭৬ শতাংশ নারী মানসিক চাপে ভুগছেন

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2025-02-23 12:46:46

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানসিক অসুস্থতা ও বিষণ্নতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা না করলে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) সারাজীবনের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে। সরাসরি সেশনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব না হলে প্রয়োজনে অনলাইনে সেশন পরিচালনার মাধ্যমে আন্দোলন সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে 'জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা' শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মাল্টিডিসিপ্লিন (সিআরএম) এবং সেন্টার ফর সাইকোলজিকাল হেলথ (সিপিএইচ) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের (ডিইউআরএস) যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন নিশিতা জামান নিহা এবং জান্নাতুন নূর হায়দার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, জুলাই-আগস্টের ঘটনা প্রচন্ড মানসিক আঘাত ও
বিষণ্নতার কারণ হয়েছিল। আন্দোলনে আহত কিংবা প্রিয়জন হারানো ব্যক্তিরা এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এমনকি যারা বাসায় থেকে সব দেখেছেন, তারাও ওইসব ঘটনা দেখে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও ট্রমা কাটিয়ে ওঠার জন্য মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিতে বলেন তিনি।

'সেন্টার ফর সাইকোলজিকাল হেলথ' এর পরিচালক নাজমুল হোসেন বলেন, আমাদের সংস্কৃতি সবসময়ই মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কবি-গীতিকার- শিল্পীরা মানব হৃদয় ও মনের অনুভূতি নিয়ে কাজ করেন, যা মানসিক সুস্থতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে যতটা মনোযোগ দিই, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও ততটাই মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যথেষ্ট অবদান রাখা সত্ত্বেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, যা তাদের মানসিকভাবে আঘাত করছে। বিপ্লবে প্রথম সারিতে থাকা মেয়েদের অবদান যথেষ্ট প্রশংসিত হচ্ছে না, যা তাদের মনে হতাশার সৃষ্টি করছে। তাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কাউন্সেলিং পরিষেবা বাড়াতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক বলেন, জুলাই-পরবর্তী সময়ে মানসিক অসুস্থতা ও বিষণ্নতা ব্যাপকহারে বেড়েছে। মানসিক সুস্থতার জন্য মনোবিজ্ঞানীরা যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছেন। নিয়মিত চিকিৎসা না করলে পিটিএসডি সারাজীবনের জন্য প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক শান্তি ও সুস্থতার জন্য গভীর শ্বাস নেওয়া, ধৈর্য ধরা, স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ, নিজের যত্ন নেওয়া এবং হাসিখুশি মনোভাব বজায় রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এস এম আবুল কালাম আজাদ, সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান, সাইকোলজি ও রিসার্চ একাডেমি এর পরিচালক মো. ওমর ফারুক প্রমুখ।

৭৬ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী অভ্যুত্থানের পরে গভীর মানসিক চাপে ভুগছেন

জুলাই বিপ্লবোত্তর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে বাংলাদেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীরা। পুরুষ ও নারী উভয় শিক্ষার্থীর মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি), হতাশা ও উদ্বেগের হার উদ্বেগজনকভাবে বেশি।

জুলাই-আগস্ট বিপ্লব পরবর্তী সময়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা' নিয়ে এক গবেষণায় এ ফল উঠে আসে।

সেন্টার ফর সাইকোলজিকাল হেলথ' এর গবেষক সাদিয়া শারমিন ও 'সেন্টার ফর রিসার্চ ইন মাল্টিডিসিপ্লিন' - সিআরএম এর প্রধান গবেষক মাহাদী-উল-মোর্শেদ শনিবার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এ সেমিনারে মূল গবেষণাপত্রের কাজ ও ফলাফল উপস্থাপনা করেন।

ফলাফল অনুযায়ী, পিটিএসডি-এর হার নারীদের মধ্যে বেশি, যেখানে ৭৬.৫২% নারী শিক্ষার্থী গভীর মানসিক চাপে ভুগছেন, যা পুরুষদের (৭২.৯০%) তুলনায় বেশি। মাঝারি থেকে গুরুতর PTSD-এর হারও নারীদের মধ্যে বেশি পাওয়া গেছে, যেখানে ৫৭.০৫% শিক্ষার্থী গুরুতর পিটিএসডি-এর শিকার, অথচ পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪৮.৩১%।

গবেষণায় বলা হয়, হতাশার হারও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ন্যূনতম থেকে মৃদু মাত্রার হতাশা অনুভব করেছেন, তবুও গুরুতর হতাশার শিকার ৩৫.৪% নারী শিক্ষার্থী এবং ২১.৬১% পুরুষ শিক্ষার্থী। অনেক শিক্ষার্থী সামান্য হতাশার শিকার হলেও, উল্লেখযোগ্য অংশ গুরুতর হতাশায় ভুগছেন যা তাদের পড়াশোনা এবং সামগ্রিক সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

গবেষণায় আরও পাওয়া যায়, পুরুষদের মধ্যে ৮৬.৭৩% শিক্ষার্থী গভীর উদ্বেগে ভুগছেন, যেখানে নারীদের মধ্যে এই হার আরও বেশি, যা ৯২.৬৮%। গুরুতর উদ্বেগ ৭১.১২% নারী এবং ৬৬.২৮% পুরুষ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাওয়া গেছে, যা প্রমাণ করে যে উদ্বেগ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর