আফরোজা সোমার জন্ম ২ অক্টোবর, ১৯৮৪ সালে কিশোরগঞ্জে
সোমার লেখালেখির জগৎ বিস্তৃত। কবিতা ও গল্পের পাশাপাশি তিনি লেখেন গদ্য, প্রবন্ধ ও কলাম
তার লেখালেখির শুরু কৈশোরে। ১৯৯৬ সালে
প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় ১৯৯৯ সালে কিশোরগঞ্জের নবধারা সাহিত্য পত্রিকায়
তার প্রকাশিত কবিতার বই তিনটি। ২০১০ সালে কথা প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতার বই ‘অন্ধঘড়ি’। এরপর ২০১৩ সালে সংবেদ থেকে ‘হারমোনিকা’ এবং ২০১৪ সালে ভাষা প্রকাশ থেকে ‘ডাহুক’ প্রকাশ হয়
তিনি বর্তমানে শিক্ষকতা করছেন অ্যামেরিকান ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি)এর মিডিয়া এন্ড ম্যাস কমিউনিকেশান বিভাগে
পাশাপাশি, ফ্রিল্যান্স নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে কাজ করছেন বিবিসি বাংলা রেডিওতে
*** ***
আমাদের হিয়ার ভেতর আমরা যখন গান হয়ে যাই
আমরা খরচ হয়ে যাচ্ছি রোজ; হিসেবের খাতায় ভাংতি পয়সার মতন সেই খরচ তুলতে ভুলে যাচ্ছেন গিন্নি মা।
জীবন-জীবন করে আমরা ছুটছি আর জীবন আমাদের নাম ধরে ডাকতে-ডাকতে ছুটছে আমাদেরই পিছু।
আমরা একটা সার্কেলে ঘুরছি এই ঘূর্ণনে কোনো বিরতি-বিন্দু নেই; দৌড়ের নিয়মে চলতে থাকলে এইখানে কোনোদিন আমাদের হবে না দেখা।
তবে, কেউ-কেউ দেখা পেয়ে যায়; তারা নিয়ম ভাঙে তারা দৌড় থামিয়ে দেয়; তাদের দেখে লুথা মনে হতে পারে তাদের দেখে বোকা মনে হতে পারে তাদের দেখে ঋষি মনে হতে পারে তাদের দেখে মনে হতে পারে ফুটো পকেট গলে পড়ে যাওয়া ভাংতি পয়সা; কিন্তু তারা জীবনের দেখা পায় চলতে-চলতে জীবন এসে একদিন হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাদের বুকের উপর সেদিন তাদের দেখা হয়ে যায়; দৌড় থেমে গেলে।
আমিও অপেক্ষায় আছি একদিন আমাদের দেখা হয়ে যাবে; জীবন মিলিয়ে দেবে তোমাকে ও আমাকে ঠিক; সেদিন ভাদ্র মাসের রোদ্দুরে ভরদুপুরে ঘামতে-ঘামতে হাসতে-হাসতে দূর গাঁয়ের মেঠো পথে আমরা বাশঁঝাড়ের নিচে এসে জিরোব; বাঁশপাতার শন শন শব্দে আমার শরীরে জাগবে শিহরণ; তাই দেখে তুমি বুঁজবে চোখ, শুনবে শনশন শব্দের ভেতর কেমন গান বয়ে যায়।
এমন দিন আমাদের সত্যিই আসবে; এমন প্রেমের দিন না এলে আমরা মরব না;
পৃথিবীতে কেউ মরে না প্রেমের দিন না দেখে; বাস্তবে না হোক, অন্তত কল্পনায় বেঢপ দেখতে ভুঁড়িওয়ালা কুৎসিত যুবকটির ঠোঁটেও ভালোবেসে চুমু খায় এক পরী; আর চির জন্ম দুঃখে থাকা ডানা খসে যাওয়া পরীটিও কল্পনায় একদিন ডানা খুঁজে পেয়ে দেয় উড়াল; উড়াল রচিত না হলে মৃত্যুর শর্ত হয় না পূরণ।
তাই, জেনে রেখো, প্রিয় এই ঘূর্ণন চাকায় আমাদের দেখা হবেই; সেই আশায় আমি দৌড় থামিয়ে বসে আছি পথের ধারে; তুমি এলে আমরা রোদের মধ্যে ঘামতে-ঘামতে মেঠো পথে হাঁটব আর শুনব বাঁশের পাতার সঙ্গে পাতার স্পর্শে কেমন হচ্ছে সঙ্গীত; শুনব, আমাদের হিয়ার ভেতর আমরা কেমন গান হয়ে যাচ্ছি।