বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নির্বাচন যতই দেরি হবে ততই জটিলতা বাড়বে। ষড়যন্ত্রকারীরা তত শক্তিশালী হবে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার ক্ষমতা সরকারের আছে কি না? নতুন দলের শক্তি সরকারের মধ্যেই লুকায়িত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার নতুন দলের জন্য অনেক কিছু করছে, অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার কারণে সরকার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে।
একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন তিনি।
সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশে অনেক সমস্যা আছে। এই রাষ্ট্রকে মূল জায়গায় আনতে অনেক সময় লাগবে। কাল বিএনপি বা যেকোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলেও রাতারাতি সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে করতে হবে। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দুর্নীতি ঢুকছে—এসব কোনোটা এক মাসে যাবে, কোনোটা ১২ মাস, কোনোটা এক বছর ও ১০ বছরও সময় লাগবে। সুতরাং সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা সংস্কার চাই। কিন্তু সংস্কারের জন্য তো নির্বাচন থেমে থাকতে পারে না।’
সহসাই সরকার নির্বাচন না দিলে বিএনপি কি করবে-এমন প্রশ্নে গয়েশ্বর বলেন, ‘সরকার অরাজনৈতিক, এটি অন্তর্বর্তী সরকার, আমরা তো এখন বিরোধী দলে নই। এখন আমি নিরপেক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে কী সমালোচনা করব? আমরাও তো তাদের আস্থায় নিয়ে সহযোগিতা করছি। আমার কাজটা হচ্ছে নির্বাচনটা আদায় করা। সেটা রাজপথের মাধ্যমে হতে পারে, আবার আলোচনার মাধ্যমে হতে পারে। এখনো আমরা তো ধৈর্য ধরছি। কিন্তু অনন্তকাল তো ধৈর্য ধরব না।’
বিএনপির ওয়ান-ইলেভেনের মতো ষড়যন্ত্রের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের যারা কুশীলব ছিল তারাই তো এখনো ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন পদে আছে। তারাই তো সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে। কেউ যদি ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতাকেই কার্যকর করতে চায়, তাহলে আমাকে যেকোনো অবস্থাতেই আন্দোলনে নামতে হবে।’
বিএনপির আন্দোলন কৌশল নিয়ে জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘১৭ বছরের মূল দাবিটা ছিল একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। এই দাবি থেকে সরে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমার মাথায় ২৮টি সেলাই আছে। অনেকে বলেন, টুপি পরেন কেন? যার মাথায় ২৮টি সেলাই থাকে, তার মাথায় কি চুল থাকে? আমি রক্ত দিয়েছি নির্বাচনের জন্য। সে নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হতে পারি, না-ও পারি। কিন্তু আমরা একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আর নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারের আমলের না, এই দাবি এই সরকার জন্মানোরও আগে। আমরা এ থেকে সরে যাব কেন?’
‘আমরা কিন্তু বলিনি আজকের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে, আলটিমেটামও দিইনি। এ কথাও বলছি যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার করা দরকার ততটুকু করেন। তাই নির্বাচনের দাবি রোজার পরও করব। এখন তো আমি অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দিইনি। আমি তো এখনো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা দিইনি। আমরা তো সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। নির্বাচন যতই দেরি হবে ততই জটিলতা বাড়বে। ষড়যন্ত্রকারীরা তত শক্তিশালী হবে। সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার ক্ষমতা সরকারের আছে কি না?’-প্রশ্ন রাখেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নিয়ে বিএনপি’র সমালোচনা কেন, তারও জবাব দেন তিনি। গয়েশ্বর বলেন, ‘নতুন দলের শক্তি সরকারের মধ্যেই লুকায়িত আছে। সরকার নতুন দলের জন্য অনেক কিছু করছে, অনেক কিছু করার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টার কারণে সরকার নিরপেক্ষতা হারাচ্ছে। ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিন এ রকম দল তৈরি করেছিল। বিভিন্ন দলের নেতাদের সংস্কারবাদী বানিয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেক নেতাকে দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু ফাইনালি ফেল করেছে। সুতরাং ওয়ান-ইলেভেনের এই খেলা, কিংস পার্টি বানানো এবং দল বানিয়ে টিকে থাকা খুব কঠিন।’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমর্থন জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটাতে সেনাপ্রধানের ভূমিকা আছে। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন। উনি বারবার বলেছেন, আপনারা নিজেরা নিজেরা কাদা ছোড়াছুড়ি করে পরিবেশ বিনষ্ট করবেন না। তিনি তো নির্বাচনের বিপক্ষে বলেননি। নিজেদের মতো রেষারেষি থাকলে কী হতে পারে সেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এটা থেকে অনেক কিছু বোঝার আছে। যার বোঝার তারা বুঝবেন।’
আলোচিত-সমালোচিত মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা যখন ১৭ বছর ধৈর্য ধরতে পেরেছি, আর কয়টা দিন করতে পারব না? এ জন্য যে অনন্তকাল বসে থাকব তাও তো না। আমি বলতে না চাইলেও নির্বাচন দিতে হবে—এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমার ইচ্ছা না থাকলেও আমাকে আন্দোলন করতে হতে পারে। তারা যদি ওয়ান-ইলেভেনের মতো মাইনাস করতে চায়, কেউ যদি মনে করে, একজন বিদেশে চলে গেছেন। আর কাউকে যদি মাইনাস করা যায়, এ রকম মনোভাব যদি থাকে তাহলে কী আন্দোলন হবে না? কারণ তারা কে আমাকে মাইনাস করার?’
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ বুঝি না। কোনো দলই নিষিদ্ধ করার পক্ষে আমি নই। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবে জনগণ। দেশে কত ধরনের রাজনৈতিক দল আছে। তাদের নামধাম কিছু আছে। তারা তো একসময় অনেক বড় দল ছিল। তাদের সমাবেশে ২০০ লোকও হয় না। কমিউনিস্ট পার্টি বাংলাদেশের প্রাচীন দল। ১৯২১ সালে জন্ম নিয়েছে। তার মানে বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের জনগণের থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে বিলীন হয়ে গেছে।