বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণকে গিনিপিগে পরিণত করার চেষ্টা করবেন না। যারা আতেল আছেন, বুদ্ধিজীবি আছেন, থাকেন। আমরা সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি কিন্তু জনগণের অধিকার কেড়ে নিবেন না।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, জনগণ এই দেশের মালিক, তারাই স্থির করবে এই দেশে কোন ধরণের সংস্কার হবে। বাংলাদেশের সংসদ বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। সুতরাং অতি দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
বর্তমান সরকার অত্যন্ত দুর্বল সরকার উল্লেখ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে অবনতির পথে। এই অবস্থা থেকে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে কেবলমাত্র একটি সঠিক ও দ্রুত নির্বাচন। আমরা জনগণের শাসন চায়, সংস্কার যদি করতে হয় নির্বাচিত সংসদ সংস্কার করবে। বাংলাদেশের জনগণ সংস্কার করবে।
তিনি বলেন, এক ধরণের আতেল বাংলাদেশে গজিয়ে উঠেছে, তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক নাই, তারা জানে যে জনগণ কখনো গ্রহণ করবে না। তাদের আজব আজব ধ্যান ধারণা জনগণের কাধে চাপিয়ে দিতে চায় ছাত্রদের মাধ্যমে।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ছাত্ররা বয়সে তরুণ, সারা পৃথিবী দেখেই নাই তাদের। এখনো বাবার হোটেলে খায়, এখনো তাদের সে ধরণের ম্যাচিউরিটি আসে নাই। তবে তাদের ধন্যবাদ জানাই, তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। বিএনপির সাথে সাথে তারাও নেমেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করতে।
তিনি বলেন, আবারও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দেখছি, বিএনপির ১৬ বছরের সংগ্রামকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, মনে হচ্ছে এই দেড় মাসের সংগ্রামে যেন দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। এই দেড় মাসের সংগ্রামেও বিএনপি ৪২২ জন নিহত হয়েছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আমাদের সচেতন হবে। বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ সরকার, তাদের মধ্যে অনেকে বলে আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। তাহলে আমরা কী জন্য জীবন দিলাম এত কর্মী? গণতন্ত্রের জন্যই তো জীবন দিয়েছে। ভোটাধিকারের জন্য। আমরা তো বলি নাই বিএনপিকে ক্ষমতায় দিয়ে দেন। আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, জনগণ যাকে ইচ্ছা বেছে নিক।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু বলেন, গণতন্ত্রের লড়াই ১৭ বছর ধরে করেছি, এটা যারা অস্বীকার, অবজ্ঞা করে, মানতে চায় না তারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে এটা বলতে পারে না। এক মাসের জন্য সব হয়ে গেল, আর গণতন্ত্রের জন্য আমার যে বোনটা স্বামীকে হারিয়ে তার কথা ভুলে যায় এটা ভয়াবহ। বাংলাদেশ এক মাসে হয় নাই। ১৭ বছরের প্রচেষ্টায় হচ্ছে দেশকে উলটপালট করে দেয়ার।
তিনি আরও বলেন, বিএনপিকে যদি রাস্তায় এক বার নামান তাহলে গণতন্ত্র না নিয়ে ঘরে ফিরব না। সরকারের কাছে আমাদের এখনো প্রত্যাশা ভালই ভালই একটা নির্বাচন করা গেলে ভাল। ঐ পাশে যারা আছেন, বাড়াবাড়ি না করায় ভাল, কিছুদিন আগে তো দেখেছেন বাড়াবাড়ি করলে কী হয়?
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান বলেন, ১৭ বছর যে জাতি ভোট দিতে পারে নাই, এই ভোটের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথ রক্তাক্ত করেছে সেই সংস্কারের ধোয়া তুলে নির্বাচন, ভোটকে পিছিয়ে দেয়ার, নির্বাচন না করার পায়তারা হচ্ছে, কিংস পার্টি করার পায়তারা হচ্ছে। আরেকদল নির্বাচনের ভরাডুবির ভয়ে পরে নির্বাচন চাচ্ছে। বিএনপি জেগে উঠেছে। আমরা ৬৪ জেলায় সমাবেশ করছি, সবাই আসছে, ভোট চাই, কোনো ষড়যন্ত্র মানি না। আমরা সংগ্রাম করেই নির্বাচন আদায় করবো ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত আছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও বিএনপির শিক্ষা সম্পাদক এস এম ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এ এস এম আমানউল্লাহ, কার্যনির্বাহী সদস্য রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।