বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে এমন দেশের তালিকায় অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ। আর এ তালিকায় এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার উপরে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
শনিবার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ইউনিসেফ, ইউএন উইমেন ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল প্রকাশিত ‘গার্লস গোলস: হোয়াট হ্যাজ চেঞ্জড ফর গার্লস? অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস রাইটস ওভার ৩০ ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে কিশোরী মেয়েদের ক্ষমতায়নে বিনিয়োগ ও নীতি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, মেয়েদের জন্য অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। শিক্ষায় বিনিয়োগের সুফল এসেছে, মেয়েদের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও উন্নতি হয়েছে। এখন কন্যাশিশুরা আগের তুলনায় তেমন একটা বাল্যবিবাহের শিকার হয় না কিন্তু বাংলাদেশের মতো বিভিন্ন দেশ এখনও এই ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি কন্যাশিশু এই ক্ষতিকর চর্চার শিকার হচ্ছে, বাল্যবিয়ের এই হার এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের দেশের তালিকায় অষ্টম অবস্থানে বাংলাদেশ। আর এশিয়ায় প্রথম। বাংলাদেশে ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০-২৪ বছর নারীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ নারী ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সন্তান জন্ম দেয়। তা ছাড়া ১৫-১৯ বছর বয়সী কিশোরী-তরুণী মেয়েদের ২৮ শতাংশ আগের ১২ মাসের মধ্যে তাদের সঙ্গীর দ্বারা শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। ১৫-১৯ বছর বয়সী বিবাহিত মেয়েদের মধ্যে মাত্র ৪৭ শতাংশ জেনেবুঝে প্রজনন স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিশ্বের যে সাতটি দেশে কিশোরী মেয়ে ও তরুণ নারীদের ডিজিটাল দক্ষতার হার ২ শতাংশ বা তারও কম তার মধ্যে বাংলাদেমের নাম থাকার বিষয়টি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ।
ইউনিসেফ জানায়, ১৯৯৯ বেইজিং ঘোষণায় যেসব অঙ্গীকার করা হয়েছিল, ৩০ বছর পরে এসে সেসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশগুলো কতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে, তার পর্যালোচনা করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উদ্বেগ জানিয়ে বলা হয়েছে, কোনও দেশই কিশোরী বয়সী মেয়েদের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি এসডিজি লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি। সেকারণে ২০৩০ এসডিজি এজেন্ডা অর্জনের জন্য আর মাত্র পাঁচ বছর বাকি থাকায় এক্ষেত্রে নতুন করে গুরুত্ব আরোপ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাংলাদেশে কিশোরী মেয়েরা একটি অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে চায়, যেখানে তারা নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং দেশের উন্নতিতে সহযোগিতা করতে পারবে।
তিনি সরকারের প্রতি কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা, সমাজকর্মী বা সমাজকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত জনবল আরও শক্তিশালী করা, শিক্ষা ও পুষ্টিতে বিনিয়োগ করা এবং সব মেয়েদের জন্য জীবন দক্ষতা অর্জন ও ডিজিটাল শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।