কম খরচসহ বিনামূল্যে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়ায় হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন হাওরের যুবকরা। ধান এবং মাছের পাশাপাশি বিকল্প পেশা হিসেবে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই হাঁস পালন। প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে ভাড়াবিহীন উন্মুক্ত জলাশয় পাচ্ছে। এতে একদিকে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে পাশাপাশি চাহিদা মিটছে প্রোটিন ও আমিষের। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলছে, বেকারদের আরো আগ্রহী করতে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ, পাশাপাশি প্রয়োজন স্থানীয় এনজিও গুলোর সহযোগিতা।
মদন থানার জঙ্গল টেংঙ্গা গ্রামের শিক্ষিত যুবক আব্দুল মান্নান। হাঁস পালনে হয়েছেন সফল। তাঁকে দেখে হাঁস পালনে উৎসাহিত হয়েছেন উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার, সকলেই দেখেছেন সফলতার মুখ। বেকার যুবকরা হাঁস পালনে পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছেন অন্যান ব্যবসায় আয় করছে একাধিক খাত থেকে।
আব্দুল মান্নান বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুকনো মৌসুমে লাভ কম হলেও, বর্ষা মৌসুমে হাওড়ে প্রাকৃতিক খাবার থাকায় লাভ অনেক বেশি। ৫ হাজার হাঁস পালনে বছরে খরচ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। বছরে শেষে শুধু ডিম ব্রিক্রি থেকে আসে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা।
হাওরে প্রাকৃতিক পরিবেশে লালন পালন হচ্ছে হাঁস। প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে ছোট বড় মাঝারিসহ বিভিন্ন ধরনের খামারি। বাড়তি আয় হিসেবে খামার করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। হাওরে রয়েছে প্রকৃতির নানান বৈচিত্র্য। আর এই সুযোগে বর্ষাকাল পর্যন্ত অনায়াসে বিস্তীর্ণ ভূমি ব্যবহার করে পালন করছেন হাঁস। বৈশেখ মাসে ফসল ওঠার সময় হাঁসের খাবার খরচও বেঁচে যায় অনেক। যে কারণে জেলার হাওরাঞ্চল মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরীতে বেশি জনপ্রিয় এখন হাঁস পালন।
জেলার প্রতিটি উপজেলার নীচু এলাকায় এখন হাঁসের খামার করে স্বাবলম্বী অনেকে। এসকল অঞ্চলের প্রায় বাড়িতেই খাবারের চাহিদা মিটাতে কমন রয়েছে হাঁস পালন। তার উপর অনেকেই বাড়তি লাভ এমনকি কায়িক পরিশ্রম কম হওয়া এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় এটিকে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছেন। এতে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে প্রোটিন এবং আমিষের যোগান হচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বার্তা২৪.কমকে জানান, হাওড়াঞ্চলের মানুষ এখন হাঁসের খামার করার জন্য বেশ আগ্রহী। হাঁসের খামার করে যুবকরা লাভবান হচ্ছে। হাঁস মূলত হাওরের প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়েই বড় হয়। বছরের দুই থেকে তিন মাস হয়তোবা খাবার দিতে হয়। বাকি সময় হাঁস প্রাকৃতিক খাবার খায়, এতে খরচ কম থাকায় এবং হাঁসের মাংস ও ডিমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বেকার যুবকরা হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছে।
জেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৬ হাজার খামারি রয়েছে। এছাড়া ছোটখাটো করে বা বাড়িতে লালন পালনের হিসাব তো করাই হয়নি। এদিকে ডিম মাংসে মিটাচ্ছে প্রোটিন আমিষের চাহিদাও।
তিনি আরো বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারিদের উন্নত করার চেষ্টা চলছে। তবে বেসরকারীভাবে এই একটি সম্পদকে কাজে লাগালে এ অঞ্চল অর্থনৈতিকভাবে আরও উন্নত হতে পারে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ডিম, মাংস, দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় ডিমের চাহিদা ছিলো ৫৩ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ৫৩.৮০ কোটি, মাংস উৎপাদনের চাহিদা ছিলো ১.৭৩ লক্ষ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ১.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২.৮০ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে ২.৯০ লক্ষ মেট্রিক টন।