করোনাকালে কীভাবে চলবে ফ্লাইট
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস-
-
|

ফাইল ছবি
করোনাভাইরাসের থাবায় আজ সবকিছু এলোমেলো। এমন কোনো খাত নেই যেখানে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির প্রভাব পড়েনি। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের অর্থনীতিও করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইন্স খাত।
বিশ্বের নামিদামি এয়ারলাইন্সের সব উড়োজাহাজ নিশ্চল পড়ে আছে। অনেক এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ অবস্থায় সামনে কিভাবে এয়ারলাইন্সগুলো টিকে থাকবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সহসাই নিস্তার মিলছে মরণঘাতী এই ভাইরাস থেকে। আর তাই ইতালি, স্পেনের মতো দেশ যেমন ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দিচ্ছে, বাংলাদেশও সেই পথে হাঁটছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে করোনার এই সংকট চলাকালে কিভাবে চলবে এয়ারলাইন্সগুলো। এ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) মহাপরিচালক আলেকজান্দ্রি দে জুনিয়াক স্পষ্টই বলে দিয়েছেন— শারীরিক দূরত্ব মেনেই এয়ারলাইন্সগুলোকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে।
আইএটিএ-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকেও তাদের নির্দেশনা মেনে সবকিছু পরিচালনা করতে হবে। দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সব ধরনের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
বেবিচক যখন ফের ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেবে তখন কিভাবে ফ্লাইট চলাচল করবে তাই নিয়ে চলছে সংশ্লিষ্টদের আলোচনা।
ইতোমধ্যে আইকাও’র নির্দেশনা অনুযায়ী একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে বেবিচক। ওই গাইডলাইন নিয়ে দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছে তারা। আর এই আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিতে।
এতে বলা হয়েছে, একজন যাত্রীর সঙ্গে অন্যজনের অন্তত তিন ফিট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে- সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হলে এটি মেনে চলতে হবে। এ ক্ষেত্রে উড়োজাহাজের এক আসনে বসবেন যাত্রী, পাশের আসন থাকবে ফাঁকা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই নিয়ম মেনেই ফ্লাইট পরিচালিত হবে সবগুলো এয়ারলাইন্সে।
বেবিচক বলছে, অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের ক্ষেত্রেও কোনো ধরনের ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই। উড়োজাহাজের ভেতরে দুইজন যাত্রী পাশাপাশি বসতে পারবেন না। কোনো একটি আসনে একজন যাত্রী বসলে তার পাশের আসনটি ফাঁকা রাখতে হবে। যদি প্রত্যেক সারিতে তিনটি করে মোট ছয়টি আসন থাকে তাহলে প্রতি সারির মাঝের আসনটি থাকবে ফাঁকা। এ ক্ষেত্রে যদি প্রতি সারিতে দুটি করে চারটি আসন থাকে তাহলে একটি আসনে যাত্রী থাকবে, অপরটি ফাঁকা থাকবে।
বেবিচক আরও বলছে, প্রতিটি ফ্লাইটের সামনে অথবা পেছনে একটি সারির আসন খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটের মাঝে কোনো যাত্রী যদি অসুস্থ বোধ করেন তাহলে তাকে ওই সারিতে আলাদাভাবে বসাতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইকাও) বেবিচকের নির্দেশনা মেনে চললে একটি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। তবে এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটের অধিকাংশই এটিআর মডেলের ছোট উড়োজাহাজ চলাচল করে। এতে পাশাপাশি দুটি সিট থাকে। বেবিচকের নির্দেশনা অনুযায়ী আসন বিন্যাস করলে মোট ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে।
আসনের নিয়ম বাইরেও বেবিচকের উড়োজাহাজ উড্ডয়নের আগে এবং অবতরণের পরে প্রত্যেকবার জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাইড করবেন, এরপরই উড়োজাহাজটি আকাশে ডানা মেলবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস দিতে হবে।
এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, আইকাও’র কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা নিয়েই সবকিছু করা হচ্ছে। এর সঙ্গে বেবিচকের নিজস্ব কিছু পরামর্শ সংযোজন করে এয়ারলাইন্সগুলোকে অবগত করা হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ফ্লাইট চালু করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তা করতে হবে।