জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মাদারদহ নদী থেকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী ব্রিজ, ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি।
মাহিন্দ্র গাড়ি দিয়ে মাটি বহন করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্তাঘাট। ভেকু মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন অবৈধ হলেও বিরতিহীনভাবে দিন-রাত বালু ব্যবসায়ীরা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মযজ্ঞ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাবশালী মহল কাউকে তোয়াক্কা না করেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এভাবে যদি বালু উত্তোলন চলতে থাকে তাহলে নদীর তীরবর্তী কৃষি জমি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হুমকিতে পড়বে বসতবাড়ি ও ব্রিজ। প্রশাসনের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের চিনিতোলা এলাকায় পুরাতন বাজার ব্রিজের ২০০ মিটার উত্তরপাশ থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে অবাধে তোলা হচ্ছে বালু। পরে ট্রাকে করে তা নেয়া হচ্ছে অন্যত্র। এলাকাবাসী বলছেন, স্থানীয় প্রভাবশালী মো. রেজাউল ও তার সহযোগীরা এসব বালু তোলার পর ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ৯০-১০০ ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে। ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু তোলায় ঝুঁকি কয়েকগুণ বেড়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে নদীর পশ্চিম তীরবর্তী ও পূর্ব তীরবর্তী ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বালু ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে কেউ কিছু বলে না। তারা অনেক প্রভাবশালী। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনও উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। দিনে-দুপুরে সবার চোখের সামনেই দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে, প্রশাসন দ্রুত বালু উত্তোলন বন্ধ না করলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।
এ নিয়ে ওই এলাকার রেনু শেখ বলেন, কয়েক বছর আগেই বন্যায় আমার জমি ভেঙে গেছে। সরকার থেকে বাঁশের পাইলিং দেওয়া হয়েছে যাতে নদী না ভাঙে। যেভাবে বালু তোলা হচ্ছে বন্যায় আবার ভেঙে যাবে। তাদের বার বার নিষেধ করার পরেও তারা বালু তোলা বন্ধ করে না। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে তারা আসলে বন্ধ হয়। আবার যাওয়ার পরেই আবার বালু তোলা শুরু হয়। এ কার্যকরী পদক্ষেপ দরকার।
চিনিতোলা বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা বালুবাহী ট্রাকের ধুলা-বালিতে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। দোকানের সব মালামালে ধুলা পড়ে। রাস্তায় পানি দিতে বললে পানিও দেয় না। যা মন চায় তাই করতেছে। কিছু বলতেও পারি না।
রহিমা খাতুন নামে নদীর তীরবর্তী এক বাসিন্দা বলেন, কয়েক বছর থেকেই নদীর পানি কমে যাওয়ার পর মাদারদহ নদীর তলায় ও নদীর পাড়ের জমি থেকে বালু মাটি কেটে বিক্রি করেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বালু তোলার কারণে প্রতি বছরই আমাদের নদী ভাঙনের কবলে পড়তে হয়। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন বাড়ির কাছে চলে এসেছে। আমাদের দাবি বালু তোলা বন্ধ করা হোক।
অভিযুক্ত বালু ব্যবসায়ী মো. রেজাউল বলেন, কয়েকদিন থেকেই বালু কাটা হচ্ছে। ক্ষেতের মালিকরাই বালু বিক্রি করছে। নায়েব অফিসের কেরানীদের জানিয়ে কাটা হচ্ছে। তাদের বলেছি ভাই একটু খেয়াল রাইখেন। নায়েবরা জানেই যে ওরা প্রতিবছর কাটেই। বালু কাটলে রিস্ক সর্বক্ষণই থাকে। ইউএনও এসিল্যান্ড যখন আসবে দৌড় দিবো ধরতে পারলে ধরলো, না ধরতে পারলে নাই, এটাই কপাল।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনীম জাহান বলেন, এ বিষয়ে কি বলব বলেন, অভিযোগ করেন থানায় অথবা ইউএনও’র কাছে বলেন, সব সময় মোবাইল কোর্ট করা আমার পক্ষে সম্ভব হয় না। কিছু বলারতো নেই আসলে। সময় পেলে মোবাইল কোর্টে যাই, সবসময় তো সময় পাইনা, এটাই তো হচ্ছে সমস্যা। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই করবো। আমি ঢাকায় যাচ্ছি, ইউএনওকে বলেন। তিনি হয়তো ব্যবস্থা নেবেন।
এ প্রসঙ্গে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস.এম আলমগীর বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কোনো সুযোগ নেই, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।