২ মাস মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে নামতে পারবেন না জেলেরা
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকারে দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
জাটকা সংরক্ষণে ভোলার মেঘনা নদীর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এবং তেঁতুলিয়া নদীর ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত ১শ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্য রাত থেকে ৩০ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ এলাকায় জাল ফেলা, মাছ পরিবহণ ও বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়।
এ সময়টাতে অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং আইন অমান্যকারীদের ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার এই দুই মাস মাছ শিকার বন্ধে জেলা মৎস্য বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টাস্কফোর্স, করা হয়েছে মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ প্রত্যেক উপজেলার নদীর পাড়ে অভয়াশ্রম এলাকায় মতবিনিময় সভা। এ নিষেধাজ্ঞায় ভোলা জেলার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩শ’ ৭৫ জন নিবন্ধিত জেলের ৮৯ হাজার ৬শ’ পরিবারের জন্য ৭ হাজার ১শ’ ৬৮ ম্যাট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে নিষিদ্ধ সময় বিগত বছরে সরকারিভাবে দেয়া জেলেদের মাঝে চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের সত্যতা পেলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ জেলেদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করে। সরকারি ভাবে বরাদ্দ জেলেদের চাল পাওয়া নিয়ে দুর্নীতির শঙ্কায় থাকেন সাধারণ জেলেরা। একদিকে পবিত্র মাহে রমজান অপরদিকে বেকারত্বের এই ২ মাস পরিবার নিয়ে কীভাবে দিন কাটবে তা নিয়ে চিন্তার ভাঁজ সবার কপালে।
ভোলার ইলিশা মাছ ঘাটের জেলে মো. জসিম উদ্দিন ও তুলাতলির জেলে আকবর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রকৃত জেলেরা সুবিধা পায় না। আপনারা লিখে যাচ্ছেন, অনিয়ম তো আর বন্ধ হয় না। প্রশাসন চুপ থাকে, তাতে লাভ হচ্ছে কী? অপরদিকে দৌলতখান মাছ ঘাটের জেলে তানবির বলেন, জেলেদের চেয়ে স্থানীয় নেতাদের লোকেরা চাল বেশি নিয়ে যায়। প্রকৃত জেলেরা পায় না। প্রতি বছরের মতো এবারও যেন অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে না হয় সেই আকুতি জেলে পরিবারগুলোর।
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডের জেলেদের তালিকা যাচাই করে জেলে নয় এমন ব্যক্তি এবং মৃত জেলেকে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত জেলেদের তালিকার কাজ চলমান রয়েছে। জেলেদের প্রকৃত তালিকা থাকলেই জেলে পুনর্বাসন প্রকল্প সফল করা সম্ভব হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, চাল বিতরণ নিয়ে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলেরা যেন সঠিকভাবে চাল পায় সে জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলেদের তালিকায় স্বচ্ছতা আনার কাজও চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। জেলে পুনর্বাসন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ভোলা জেলার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩৭৫ জন জেলেকে মাসে ৪০ কেজি করে ২ মাসে ৮০ কেজি হারে মোট ৭ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।