হয়রানিমূলক মামলা বন্ধে প্রয়োজন জরুরি কার্যকর পদক্ষেপ

  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেশজুড়ে হয়রানিমূলক মামলার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। নিরপরাধ অনেকেই এসব মামলার আসামি হয়ে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। খবরের কাগজ-রবিবার এ নিয়ে সম্পাদকীয় প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য সেই সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হলো: 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশজুড়ে চলছে মামলা দায়ের। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, এ আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা মানুষকেও হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ উঠেছে, হয়রানি করতে অনেককে আসামি করা হচ্ছে। এদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। মামলার বাদী আবার এসব নারী আসামিকে চেনেনও না। মামলার এক নারী আসামিকে পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি রাজধানীর সুত্রাপুর এলাকা হত্যার ঘটনাস্থল হলেও ঢাকার বাইরে থাকা অনেককে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি বা দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জামায়াতের নেতারা কাদের অত্র মামলার আসামি করা হবে তা নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করছেন। অর্থাৎ মামলা সাজানোর কাজটি করছেন। এতে করে অনেক নিরপরাধ মানুষ হত্যা মামলার আসামি হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুথান ও পরবর্তী সময়ে ৭৬৬ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এসব ঘটনায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় মামলা হয়েছে। একেক মামলায় শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। এ ধরনের মামলা এখনো হচ্ছে। এসব মামলার আসামি হচ্ছেন ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিল্পী, খেলোয়াড় ও নাগরিক আন্দোলন কর্মীসহ সাধারণ মানুষ। দেশের জনগণের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে।

এই মামলার রাজনৈতিক নেতা ছাড়া অন্য যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই জানেন না যে তারা আসামি। খবরের কাগজের অনুসন্ধানের তথ্য এসেছে, গৃহিণী শামীমা স্বামীর মালিকানাধীন একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত! সুত্রাপুরে তিনি কখনো যাননি। এ ছাড়া তিনি ধানমন্ডি-মোহাম্মদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অভিভাবক হিসেবে মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন। এর পরও তাকে হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে। এ রকম বেশ কিছু তথ্য খবরের কাগজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে যারা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও যাচাই-বাছাই না করে মিথ্যা বা ভুয়া মামলা দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি না করার অনুরোধ
এসেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রমতে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে যে যেভাবে পেরেছে মামলা দিয়েছে। এ ছাড়া কোর্টে মামলা হওয়াতে কে বা কাকে আসামি করা হচ্ছে সে বিষয়ে জানা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে নানা ধরনের মামলা দেখা যাচ্ছে। কোনোটিতে ৩০-৪০ ও ৫০ জনের বেশি করে আসামি। অনেকের রাগ ও ক্ষোভ থাকতে পারে, কিন্তু এ ধরনের মামলা লিখলে কাজ হবে না, টিকবে না। প্রথম ধাপই পার হতে পারবে না। মামলাগুলো আন্দোলন ও আন্দোলনের
ফসলকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা বন্ধ করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে হত্যাকাণ্ডে যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর এজাহারে স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে। অস্পষ্টতা থাকলে নিরপরাধীরা শাস্তি পাবে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যাবে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময়ের অনেক ভিডিও ফুটেজ রয়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। কারও প্রতি অবিচার নয়। মামলার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা ঠিক রেখে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে। -খবরের কাগজ’র সৌজন্যে