ন্যায়বিচার প্রশ্নে বিপথগামী পন্থা

  • ডেস্ক রিপোর্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

-ছাত্রদের হাইকোর্ট ঘেরাও, গতকালকের ছবি

-ছাত্রদের হাইকোর্ট ঘেরাও, গতকালকের ছবি

বৃহস্পতিবার আওয়ামীপন্থি ‘ফ্যাসিস্ট বিচারকদের’ পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে শুক্রবার সম্পাদকীয় পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার। বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য বাংলায় অনূদিত সম্পাদকীয় প্রকাশিত হলো:

বিচারকদের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ‘আওয়ামী লীগপন্থী ফ্যাসিবাদী বিচারকদের’ পদত্যাগের দাবিতে ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে কিছু ছাত্র নেতার বিক্ষোভ দেখানো নিঃসন্দেহে হতাশাজনক এবং অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ছিল। যে দেশে আইনের শাসন বহাল, সেখানে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরকে পবিত্রতার সাথে বিবেচনা করা উচিত।

বিজ্ঞাপন

প্রশ্নবিদ্ধ বিচারকদের অপসারণের জন্য বিচার ব্যবস্থা এবং প্রধান বিচারপতিকে খোদ আদালতে প্রাঙ্গনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাধ্যমে চাপ দেওয়া সঠিক পদ্ধতি নয়, কারণ এটি বিচার বিভাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে না। 

যুক্তির খাতিরে, ধরে নেওয়া যাক বিতর্কিত নিয়োগের কারণে এই বিচারকদের অপসারণ করা উচিত। তথাপি, এটি সম্পন্ন করার জন্য একটি সঠিক এবং আইনি উপায় আছে। যদি আইনের শাসনকে প্রাধান্য দিতে হয় তবে অবশ্যই এই ধরণের কর্মসূচি আদালতের প্রাঙ্গণে কাম্য নয়, কারণ এটি আদালত এবং বিচারালয় সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞাপন

বিগত স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের শাসনামলে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি কিভাবে আইনি ব্যবস্থাসহ সকল শাসনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। আমরা যে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করার আকাঙ্খা পোষণ করি, সেখানে আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, কেউ তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একইভাবে সিস্টেমকে বাইপাস করবে না। কারণ এটি একটি বিপজ্জনক নজির স্থাপন করবে যা ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে।

যাদের নিয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিযোগ উঠেছিল আন্দোলনরত ছাত্ররা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে তাদের উদ্বেগ জানাতে পারত। এটা সত্য যে, আওয়ামী লীগ তার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার সময় অনুগত বিচারক দিয়ে হাইকোর্ট সয়লাব করার অসংখ্য অভিযোগ আছে।

তা সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই উদ্বেগের সমাধান করতে পারতেন, কারণ সেই বিচারকদেরও আত্মপক্ষ সমর্থনের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। এর আলোকে অন্তত প্রধান বিচারপতি তাদের অপসারণের যথাযথ প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেননি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপাতত ১২ জন বিচারককে বেঞ্চে নিয়োগ দেওয়া হবে না, যার অর্থ তারা আপাতত বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।

যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করার জন্য- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে হস্তান্তর করার লক্ষ্যে সাংবিধানিক সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আগের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কেবল একটি পর্যালোচনা আবেদন প্রত্যাহার করতে হবে। পরে, বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে উপস্থাপন করা যেতে পারে, যা তাদের অপসারণের জন্য যথেষ্ট কারণ আছে কিনা তা নির্ধারণ করবে।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু প্রয়োগের স্বার্থে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এটি অর্জনের জন্য, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে, এমনকি যে কোনও ভুল সংশোধনের ক্ষেত্রেও। তাই, ছাত্রদের প্রতি আহ্বান, আমরা আপনাদের মতামতকে সম্মান জানাচ্ছি, তবে এই আইনি প্রক্রিয়াটিকেও আপনাদের সম্মান জানাতে হবে।

দ্য ডেইলি স্টার’র শুক্রবারের সম্পাদকীয় থেকে ভাষান্তর