পক্ষপাতিত্বের মূল চালিকাশক্তি-ই হোক সংবাদ মাধ্যমের নিজস্ব স্লোগান

  • মোঃ কামরুল ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সত্যের সন্ধানে নির্ভীক, শুধু দেশ ও জনগনের পক্ষে, আঁধার পেরিয়ে.., যা কিছু ভালো তার সঙ্গে প্রথম আলো, ইত্যাদি ইত্যাদি শ্রুতিমধুর নিজস্ব স্লোগান আছে বাংলাদেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমে। স্লোগানগুলো একটি সংবাদ মাধ্যম তথা একটি দেশকে এগিয়ে নিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় গণমাধ্যমের কল্যাণে একটি সংবাদে চোখ আটকে গেছে, তা হচ্ছে আসন্ন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন দিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। একদিকে নিউইয়র্ক টাইমস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী প্রভাব বিস্তারকারী সংবাদ মাধ্যম আবার অপরদিকে কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট।

বিজ্ঞাপন

বিগত দিনেও এ ধরনের পক্ষপাতিত্ব দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার তুলে ধরে সাধারন নাগরিক তথা ভোটারদের উদ্দেশ্যে। সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচন কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবসময়ই জনকল্যাণের জন্যই তৈরী হয়ে থাকে। দলগুলো নির্বাচিত হওয়ার পর অধিকাংশ সময়ই নির্বাচনী ওয়াদা ঠিকভাবে রক্ষা করে না বা বাস্তবতার নিরিখে করতে পারে না।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে ঘোষণা দিয়ে কোনো সংবাদ মাধ্যম অবস্থান নিয়েছে তা আমার স্মৃতির খাতায় তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর নীতি একসময় ছিলো সম্পাদকদের নীতির প্রতি অবিচল থাকা। যদিও সকল সংবাদ মাধ্যমে নিজস্ব নীতির সাথে সমর্থক বিভিন্ন স্লোগান থাকে। সবারই মূল বক্তব্য থাকে খবর হবে নিরপেক্ষ কিংবা আমরা থাকবো জনগনের পক্ষে কিংবা আমাদের অবস্থান সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ইত্যাদি ইত্যাদি।

বিজ্ঞাপন

বিশ্ব রাজনীতিতে একসময় সুস্পষ্টভাবে দ্বি-মেরু কেন্দ্রিক ছিলো সবকিছু। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। সারাবিশ্বের দেশগুলোই ছিলো দ্বিধাবিভক্ত। ঘটনার পরিক্রমায় দ্বি-মেরুর পরও এখন নানাশক্তির উন্মেষ ঘটেছে। মূলশক্তির সহযোগী ভূমিকায় অনেক দেশের আবির্ভাব ঘটেছে। ঠিক যেন বিশ্বশক্তির ডামাডোলের ন্যায় বাংলাদেশের রাজনীতিও যেন একই ধরনের পরতে পরতে সাজানো ছিলো। ৫৩ বছরের বাংলাদেশের রাজনীতির নাটকে অনেক চরিত্রের আবির্ভাব ঘটেছে। ঘটেছে অনেক দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ঘটনাও।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যেন নিজেদের যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন রূপী শক্তির বিবেচনায় অবস্থান নিতে চেষ্টা করেছে। নিজেদের দ্বন্দকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশী ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদকে গুরুত্ব দিয়েছে। সব আদর্শবাদের নিয়ামক কিন্তু এ দেশের আপামর জনগন। গণতন্ত্রের আদলে স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র কি জিনিস তা রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপভোগ করেছে বাংলার জনগণ।

একাত্তরের মহান স্বাধীনতার পূর্নাঙ্গ আস্বাদন পেতে চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলন করতে হয়েছে। ছাত্র-জনতাকে জীবন দিতে হয়েছে পাকিস্তানের পরাজিত সৈনিকদের থেকে বেশী পৈশাচিক আনন্দে লিপ্ত বাংলাদেশের আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক বাংলাদেশ পুলিশের একশ্রেনীর অতি দলকানা গোষ্টির নির্মম বুলেটের আঘাতে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন বাংলাদেশকে রক্ষায় সকলের এগিয়ে আসতে হবে। গনতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে একটি সুষ্ঠ সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন সরকার নির্বাচিত নতুন সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে -এটাই সকলের প্রত্যাশা।

শুরু করেছিলাম কমলা হ্যারিসকে নিউইয়র্ক টাইমসের সমর্থন দিয়ে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দেশের সকল গণমাধ্যম যদি নিজেদের বিচার বিশ্লেষনের মাধ্যমে অতীত কর্মকান্ড ও ভবিষ্যৎ কর্ম পরিকল্পনার উপর নির্ভর করে কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিতে চায় সেটা কি খুব বেশী বালখিল্য মনে হবে? ভবিষ্যতে সরকার গঠন করার পর কি বিপক্ষ অবস্থাকারী গণমাধ্যমের উপর আইনের খরগ নেমে আসবে কিনা কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় সেই গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে কিনা তার উপর এখনই আলোকপাত করা উচিত বলেই মনে করছি।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে একধরনের কর্পোরেট কালচার চলে আসছে, এই পরিবর্তন ঘটেছে সময়ের পরিক্রমায়। হোক সেটা প্রিন্ট বা অনলাইন কিংবা ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশে নেতৃস্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো কোনো না কোনো গ্রুপ অব কোম্পানীজ এর অধীনে পরিচালিত হয়। সাংবাদিকরা যতই নিরপেক্ষ থাকুক না কেনো কিংবা সম্পাদক যেই নীতিতেই থাকুক না কেনো, সাংবাদিক কিংবা সম্পাদককে সংবাদমাধ্যমের মালিকের নীতির উপর পরিচালিত হতে হয়। এই ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে সাংবাদিক আর সম্পাদক যেন সংবাদ মাধ্যমের নিজস্ব স্লোগানকেই তুলে ধরেন সেই প্রত্যাশাই করছি।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, কার্যকরী সদস্য, বাংলাদেশ জনসংযোগ সমিতি