ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে বরিশাল শহরের বিভিন্ন মার্কেটে জমে উঠেছে কেনাকাটা। ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ক্রেতারা। তবে এই আনন্দের মাঝে রয়েছে কিছু অসন্তোষও। বিশেষ করে দাম নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
বুধবার (১৯ মার্চ) বরিশালসহ আশপাশের জেলা শহরের মার্কেটগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি।
বরিশালের বিখ্যাত পার্ক মার্ট, টপটেন, চিপস বাজার এবং অন্য সব মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মানুষ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে অনেকেই এখানকার মার্কেটগুলোতে কেনাকাটা করছেন। এমনকি প্রবীণ এবং ছোট সদস্যদেরও সঙ্গে নিয়ে তারা বিভিন্ন পণ্য কিনছেন।
কর্মব্যস্ত শহর বরিশালে এসব মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। কেনাকাটার জন্য সকাল থেকেই মানুষ আসছে, আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বেড়ে যাচ্ছে। তবে, ক্রেতারা অভিযোগ করছেন যে, কিছু পণ্যের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ কিছুটা বেড়েছে, যা তাদের জন্য সমস্যা তৈরি করেছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ মৌসুমে তাদের ব্যবসা অনেকটাই বাড়ছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী জানান, বাজারে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পোশাক, জুতা, প্রসাধনী এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কিছু ক্রেতা দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিশেষত, ভারতীয় অরগেনজা, মেঘা, পাকিস্তানি সারারা, গারারা এবং শাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছুটা হতাশ। ক্রেতাদের মধ্যে বাচ্চাদের পোশাক এবং কসমেটিক্সের চাহিদাও বেড়েছে।
সিনিয়র সাংবাদিক কামরুজ্জামান বাচ্চু (৫২) বলেন, ঈদ আসলেই আমাদের পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এখানে আসা। পছন্দের দোকানে গিয়ে কিনতে বেশ ভালো লাগে, কিন্তু দামগুলো একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে। নাজমিন জামান মুক্তি বলেন,বাচ্চাদের জন্য এখানে কেনাকাটা করতে আসি, প্রতিবছর টপটেন ও পার্ক মার্টে কেনাকাটা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। রোজা রেখে যখন পরিবারের সবাইকে কেনাকাটা করি, তখন ক্লান্তি হলেও মনে একটা শান্তি থাকে।
আসাদুজ্জামান সোহাগ নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি শুধু প্রয়োজনের তাগিদেই কেনাকাটা করতে আসি। তবে এখন দাম বেশিই হয়ে গেছে, আমাদের মতো নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য দামটা খুব একটা সহনীয় নয়। বিশেষ করে দুই মেয়ের জন্য ড্রেস কিনে দিয়েছি, কিন্তু স্ত্রীর জন্য এখনও কিনতে পারিনি।
মার্কেটের মালিকরা জানাচ্ছেন, ঈদ মৌসুমে পণ্যের বিক্রি বেশ বেড়েছে, কিন্তু তাদের কাছে কেনা পণ্যের দামও বেড়েছে, যা বিক্রির ওপর প্রভাব ফেলছে। তারা প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের সঙ্গে দাম নিয়ে কিছু বিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন, তবে তারা বলছেন, পোশাকের কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়।
বরিশালের কোহিনূর জুতা দোকানের মালিক আজিম হোসেন বলেন, আমরা নিজেরাই জুতা তৈরি করি, ফলে আমাদের জুতার দাম আরও সাশ্রয়ী। তবে, বাটা, লোটো বা সাম্পান থেকে কিছুটা বেশি দাম লাগছে, কারণ পরিবহন খরচও বেড়েছে।
কর্মী আল আমিন হোসেন বলেন, আমরা যখন দাম বাড়িয়ে পণ্য কিনি, তখন বিক্রিও সেই অনুযায়ী করতে হয়। তবে চেষ্টা করি, সব কিছু ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রাখার।
বরিশালের চকবাজার, হেমায়েতউদ্দিন সড়ক, সিটি মার্কেট, ফাতেমা কমপ্লেক্স সহ অনেক ছোট বড় মার্কেটগুলোতে বর্তমানে একাধিক প্রকার পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বাচ্চাদের পোশাক, শাড়ি, থ্রি-পিস, এ্যামিটিশনারী গহনাসহ অন্যান্য প্রসাধনীর বাজারও জমজমাট। তবে, মূল্য বৃদ্ধির কারণে অনেক ক্রেতা হতাশ। শহরের বড় মার্কেটগুলোর মধ্যে নারীদের তুলনায় পুরুষদের ভিড় কম দেখা যাচ্ছে, তবে তরুণ-তরুণীরা বেশিরভাগ সময় শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবির দোকানে কেনাকাটা করছেন।
এখনও পর্যন্ত ঈদের কেনাকাটা জমে উঠেছে, তবে কিছু জায়গায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েও লাভের মুখ দেখছেন। এবারের ঈদে পোশাকের দাম বেশি হওয়ায় অনেক পরিবারের বাজেট ছাড়িয়ে গেছে। পরিবহন খরচ ও পণ্যের দাম বাড়ানোর কারণে তারা কোনো বিকল্প পন্থা গ্রহণ করতে পারছেন না।