অনুসন্ধান কার্যক্রম জোরদার, এগিয়ে আনা হচ্ছে ১০০ কূপ প্রকল্প

, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2025-03-09 10:10:48

একশ কূপ খনন প্রকল্প থেকে ৭টি কূপ এগিয়ে এনে ২০২৫ সালেই খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কর্মসূচি জোরদার করার অংশ হিসেবে ওই প্রকল্প এগিয়ে আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তারমধ্যে ২০২৬-২০২৮ সালের জন্য নির্ধারিত ১০০ কূপ প্রকল্প থেকে ৭টি কূপ এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় ৭টি কূপ চলতি বছরেই খনন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি কতগুলো কূপের ওয়ার্কওভার করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি এর মাধ্যমে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদনের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।

২০২৪ সালের ১০০ কূপ খনন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে ৬৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ আর ৩১টি পুরাতন কূপের ওয়ার্কওভার। ওই প্রকল্পের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কোম্পানি বাপেক্স ৫২টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন, ৩১ কূপের ওয়ার্কওভার, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ৯টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন, ১২ কূপের ওয়ার্কওভার আর সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি ৮টি অনুসন্ধান ও উন্নয়ন এবং ৩ কূপের ওয়ার্কওভার করার কথা।

ওই প্রকল্পে ১৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করেছে পেট্রোবাংলা। গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) ও কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন ৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ও সরকারি তহবিল থেকে ১৩ হাজার ৩২৮ কোটি প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০২৬ সালে শুরু করে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল তখন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেখান থেকে ৭টি কূপ এগিয়ে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ১০০ কূপ প্রকল্পে অনেকগুলো পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ১০০ কূপের মধ্যে একটি অগ্রাধিকার তালিকা করা হচ্ছে। যেসব কূপে সবচেয়ে সম্ভাবনা বেশি, যেখানে গ্যাস পেলে দ্রুত পাইপলাইনে দেওয়া যাবে এমন কিছু কূপ এই তালিকায় থাকছে।

ওই তালিকায় বাপেক্সের ৯টি এবং এসজিএফসিএল ও বিজিএফসিএল এর ৫টি কূপ থাকছে বলে জানা গেছে। বাপেক্সের ৯টি কূপের জন্য পৃথক ৩টি ডিপিপি করার হচ্ছে। সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বেগমগঞ্জ-৫ ও ৬, সুনেত্র-২ প্রকল্পের ডিপিপি। প্রকল্পটির ডিপিপি একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বেগমগঞ্জ-৭, চরলক্ষা-১ ও সেমুতাং-১ এর ফিজিবিলিটি চলমান, প্রায় একই ধাপে রয়েছে সুবর্ণচর-১, নোয়াখালী-১ ও সুন্দলপুর-৫।

পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ৬৯ কূপের মধ্যে প্রায় অর্ধেক রয়েছে নির্ভরশীল কূপ। অনেকটা এমন অনুসন্ধান কূপে গ্যাস পাওয়া গেলে সেখানে উন্নয়ন কূপ করা হবে। সে কারণে প্রকৃত অর্থে ৩৫টির বেশি কূপ এই মুহুর্তে খনন করার সুযোগ নেই। প্রথম ধাপে ৩৫টির মতো হয়ে গেলে পরেরগুলো খনন করতে হবে। যেমন জকিগঞ্জ-২ সফল হলে জকিগঞ্জ-৩ কূপ খনন করা হবে।

বর্তমানে ৪৮ কূপ খনন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। যদিও পরে কূপের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০ কূপ করা হয়েছে। ২০২৫ সালে শেষ হতে যাওয়া ওই প্রকল্পে বাপেক্সের ১৭টি কূপ ছিল পরে ১টি কূপ বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছে। এসব কূপের মধ্যে ১০টি খনন শেষ হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে জামালপুর কূপের, শিগগিরই শুরু হবে শ্রীকাইল-৫, সুন্দলপুর-৪ ও সুন্দলপুর সাউথ-১। উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে ভোলা নর্থ-৩ ও ৪, শাহবাজপুর-৫ ও ৭ শাবাজপুর নর্থ ইস্ট-১ খনন প্রকল্পের। ৫০ কূপ খনন প্রকল্পে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে জকিগঞ্জ-১ ও ২। জকিগঞ্জের জন্য এখন ডিপিপি চূড়ান্ত করতে পারেনি বাপেক্স। থ্রি-ডি রিপোর্টের কারণে বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর ৩ বছরে ৬৯টি কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। একে অনেকে উচ্চাভিলাষী মনে করলেও খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেছেন, একটি কূপে গ্যাস পাওয়া না গেলে হৈচৈ শুরু করলে চলবে না। ১০টির মধ্যে ৮টি ড্রাই হলে ফেলে আসবো তাহলে সম্ভব না। রাজস্থানে ইউনোকল টানা ১৩টি কূপ খনন করে ড্রাই পায়। এরপর কোম্পানির সদরদফতর বলেছিল আর কূপ খনন না করতে, কিন্তু জিওলজিষ্ট অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চৌদ্দ নম্বর কূপ খনন করে ভারতের সবচেয়ে বড় খনি আবিস্কার করেছে।

পেট্রোবাংলার ১০০ কূপ খনন প্রকল্প সংক্রান্ত সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেছিলেন, ২৫টি কূপ খনন করে যদি ব্যর্থ হন, যদি ছাব্বিশ নম্বর কূপে গ্যাস পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। খরচের কয়েকগুন উঠে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর