ঘন ঘন ভূকম্পন: যে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2025-03-06 13:27:28

গেল ১০ দিনে দেশে চার বার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় আরও বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভূতত্ত্ববিদদের শঙ্কা, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৪০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে স্বল্পমাত্রার ভূকম্পনের আঘাতের ফলে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। গত ১০ দিনে চার দফা ছোট থেকে মাঝারি আকারের যে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে তার প্রতিটিরই উৎপত্তিস্থল ছিল দেশের সীমানার ভেতর বা আশপাশে। খবর ইত্তেফাক’র

গতকাল বুধবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা কেঁপে উঠে ভূমিকম্পে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৫.৬। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুরের রাজধানী ইম্ফ‌লের ইয়ারিপক এলাকা। ভূমিকম্পটির গভীরতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের কর্মকর্তা মো. রুবায়েত কবীর জানান, ঢাকা থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ৪৪৯ কিলোমিটার। ভূমিকম্পে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বেশ কয়েকটি স্থানে কম্পন টের পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত ১০ দিনে দেশে চার বার ভূমিকম্প অনুভূত হলো।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের কারণে এসব সিসমিক কর্মকাণ্ড ঘটছে, যা স্বাভাবিক হলেও তাতে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রতিটি ভূমিকম্পের পর নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সিসমিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এসব ভূমিকম্প দেশের ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। তারা আরও বলেন, ভূমিকম্পের মাত্রা কম হলেও এর পরিণতি হতে পারে বড়, তাই নাগরিকদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে এবং কাছাকাছি এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প হয়। ২০২৩ সালে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১টি এবং গত বছর ২০২৪ সালে দেশে ও আশপাশে ৫৩টি ভূমিকম্প হয়েছে। এটি ছিল আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ভূকম্পনের সক্রিয় এলাকায় অবস্থিত। দুর্যোগ সূচক অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোটখাটো কম্পন দেশের আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা নির্দেশ করে।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্মিজ প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেটের পরস্পরমুখী গতির কারণেই ঘন ঘন এ ধরনের ভূমিকম্প হচ্ছে। এ দুটি প্লেটের সংযোগস্থলে প্রচুর পরিমাণে শক্তি জমে রয়েছে, যেগুলো বের হয়ে আসার পথ খুঁজছে। আগে হোক বা পরে, এই শক্তি বেরিয়ে আসবেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ছোট ও মাঝারি ভূকম্পনে বড় শক্তি বের হওয়ার একটা প্রবণতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার মানে, যে কোনো সময় একটি বড় ভূমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো ফেরত আসার একটি সময় হয়ে গেছে। তবে এই বড় ভূমিকম্প কবে হবে, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। গত বছর হওয়া ‘আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট : রাজউক অংশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকায় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকার ৪০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়া একটি বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির লক্ষণ। আমাদের জরুরি ভিত্তিতে সিলেটসহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে ভূমিকম্পের সময়ে কী করতে হবে, তার মহড়া দেওয়া শুরু করতে হবে। ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি ও মহড়াকে নিয়মিত চর্চার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।’

জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় (২০২১-২০২৫) বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যদি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে সারা দেশে ৬ কোটি ১২ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বলেন, পার্বত্য সীমান্ত আর সিলেট অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। যেখানে ভূমিকম্প হলে সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহসহ জনবহুল শহরগুলোতে বড় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ঝুঁকি প্রশমনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

তাঁর মতে, ঢাকা শহরে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে ৭২ হাজার ভবন তাত্ক্ষণিকভাবে ধসে পড়বে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে। বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে গেলেও তাকে মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতির অভাব আছে বলেই তারা মনে করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর