শীতের বিদায় বেলায় ফাল্গুনের শুরুতে মুশুল ধারের বৃষ্টিতে ফসলের মাঠে হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারে। বসন্তের শুরুতে বৃষ্টিপাত ফসলের আর্শিবাদ মনে করে বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন লালমনিরহাটের চাষিরা।
জানা গেছে, তিস্তা ধরলা আর সানিয়াজান নদী বেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। কৃষির উন্নতির সাথে জেলার অর্থনীতির মুক্তি ঘটে। কৃষিই জেলার অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। শীতের শেষে বসন্তের আগমন ঘটেছে প্রকৃতিতে। বসন্তের শুরুতে নানান ফসলে ভড়ে উঠেছে জেলার ফসলের মাঠ। বোরো ধান আর ভুট্টা তামাকের পাশাপাশি নানান সবজিতে ভরপর জেলার ফসলি মাঠ। ফাল্গুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে রোববার সকালে মুশুল ধারে বৃষ্টি হয় লালমনিরহাটে। বৃষ্টিতে ভিজে ফসলের ক্ষেত যেন মাতৃদুগ্ধ পেয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ফসলের মাঠে ফুটে উঠেছে কৃষকের হাসি। বৃষ্টির পানির কারণে সেচ যেমন কম লাগছে তেমনি সার কীটনাশকও কম লাগবে। এতে খরচ কমার পাশাপাশি ফসলের উৎপাদনও বাড়বে বলে আশা করছেন চাষিরা।
কৃষকরা জানান, শীতের কারণে নষ্ট হতে বসা নানান সবজি ও বোরো ধান ক্ষেত অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এমন সময় রোববার সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ফসলের ক্ষেতগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্তমানে বোরো ধান, ভুট্টা, আলু, তামাক, বেগুন, মরিচ, পিয়াজ ও মিষ্টি কুমড়াসহ নানান জাতের ফসল মাঠে রয়েছে। সেচও দিচ্ছেন চাষিরা। ঠিক এমন সময় রোববার সকালে হঠাৎ লালমনিরহাটের আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে যায়। আকাশে মেঘ দেখে প্রথম দিকে শীলাবৃষ্টির শঙ্কা করলেও শীলাবৃষ্টি হয়নি। শুধু মুশুল ধারে বৃষ্টি হয়েছে। যা ফসলের জন্য ছিল আর্শিবাদ।
আদিতমারীর চন্ডিমারী গ্রামের কৃষক আজিজার রহমান বলেন, সকালে আকাশের মেঘ দেখে অনেকটা আতংকে ছিলাম শীলাবৃষ্টি হয় কি না? কয়েক বছর আগে শীলাবৃষ্টিতে সবজি ক্ষেতে যথেষ্ট লোকসান গুনতে হয়েছিল। এবারের ফাল্গুনের বৃষ্টিতে ফসলের যথেষ্ট উপকার হয়েছে। সেচ দেয়া কমে গেছে। সকালের বৃষ্টিতে বিকেলেই ফসলের ক্ষেতের চিত্র পাল্টে গেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে বাম্পার ফলন হবে। সবজিসহ বোরো ক্ষেতের জন্য এ বৃষ্টি আর্শিবাদ হয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, দুই বিঘা জমিতে আগাম জাতের শসা চাষ করেছি। যা আগামী সপ্তাহে বাজারে পাঠানো যাবে। পবিত্র রমজানে শসার চাহিদা বিবেচনা করে আগাম শসা চাষ করেছি। এ বৃষ্টির পানি পেয়ে শসার গাছগুলো বেশ সতেজ হয়ে উঠেছে।
তামাক চাষি ইকবাল হোসেন বলেন, সকালে মেঘ দেখে ভয় পেয়েছিলাম। শীলাবৃষ্টি হলে তামাকের ক্ষেত পুরো নষ্ট হত। আল্লাহর রহমত শীলা পড়েনি। হয়েছে বৃষ্টি। এ বৃষ্টিতে তামাক পাতার আঠাটা ধুয়ে যাওয়ায় ওজন কিছুটা কম হলেও বৃষ্টির পানিতে তামাকের গাছগুলো বেশ সতেজ হয়ে উঠেছে।
আদিতমারী উত্তর পাড়ার আলু চাষি কাজল মিয়া বলেন, আলুর তেমন ক্ষতি হয়নি এ বৃষ্টিতে। উল্টো উপকার হয়েছে। উঠতি আলু ক্ষেতে যে পরিমাণ সেচ প্রয়োজন ছিল ঠিক ততটুকু বৃষ্টি হয়েছে। এতে উপকার হয়েছে। তবে বৃষ্টি বেশি হলে আলু ক্ষেতে পানি জমে যেত। তখন আলুতে দাগ পড়ত। দাগ পড়া আলুর চাহিদা কম। এ বৃষ্টি সব ফসলের উপকার করেছে।
লালমনিরহাটের পাশ্ববর্তী কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষেণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বলেন, রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২ টার পূর্ব পর্যন্ত ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টি কৃষি ফসলের জন্য যথেষ্ট উপকার হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. সাইফুল আরেফিন বলেন, ফাল্গুনের বৃষ্টি জেলার কৃষকদের জন্য আর্শিবাদ হয়ে এসেছে। ভুট্টা, বোরো ধান আর সবজির সর্বাধিক উপকার হয়েছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টিতে কোন ফসলের ক্ষতি হয়নি। বরং উপকার করেছে। বৃষ্টির কারণে সেচ সার খরচ কমবে এবং উৎপাদনও বাড়বে। বৃষ্টির কারণে হাসি ফুটেছে কৃষক পরিবারে।