সংযুক্ত আরব আমিরাতের খুচরা ব্যবসায়ীরা পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোক্তাদের নানা রকম সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে পণ্যের মূল্য ঠিক রাখা, এখন কিনে পরে দাম দেওয়ার সুযোগ, ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে অতিরিক্ত মূল্য ছাড় এবং পাঁচ হাজার দিরহামের গিফট কার্ড। আর সবার ওপরে রয়েছে, ‘গত বছরের চেয়েও কম দাম’-এই প্রতিশ্রুতি।
দেশটিতে সরকার ও বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা বিশাল সব হাইপার মার্কেট চালায়। এসব বিপণিবিতানে পাওয়া যায় না এমন জিনিস বিরল। হাজার হাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি হয় এসব হাইপার মার্কেটে। অনেক পণ্যে এমনকি ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব ছাড়ের মোট মূল্য দাঁড়াবে ১০ কোটি দিরহাম।
খালিজ টাইমস সূত্রে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন ও নুন যেমন নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে, তেমনি হাইপার মার্কেটগুলোও অনলাইন এবং দোকানে এসে পণ্য কেনার ক্ষেত্রে সুবিধা দিচ্ছে। মাজিদ আল ফুতাইমের মালিকানাধীন ক্যারেফোর শুরু করেছে ‘গত বছরের চেয়েও কম মূল্য’ প্রচারণা।
ক্যারেফোর পাঁচ হাজার পণ্যে ৫০ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে নিত্যপণ্য, তাজা খাদ্য, রান্নার সরঞ্জাম, ইলেকট্রনিকস এবং আরও অনেক কিছু। এর বাইরে চাল, দুধ, তেলের মতো ১০০টি পণ্যের দাম স্থির রাখার ঘোষণা দিয়েছে এই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ক্যারেফোর পাঁচ কোটি দিরহাম বরাদ্দ করেছে, যাতে আরও ১০০টি পণ্য গত বছরের চেয়ে কম দামে বিক্রি করা যায়। তেল আর দুধের দাম সবচেয়ে কম থাকবে বলে তারা জানিয়েছে।
আরব আমিরাতে আরেক পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সাফির। এই প্রতিষ্ঠানটি ৬০০ পণ্যের ওপর বিশেষ মূল্যসুবিধা দিচ্ছে। অনেক পণ্যে ৫০ শতাংশের বেশি মূল্য ছাড় দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য ‘সব পরিবারের চাহিদা মেটানো।’
লুলু গ্রুপ হাইপার মার্কেট পরিচালনা করে। তারা ঘোষণা করেছে, পোলট্রি পণ্য, তাজা ও হিমায়িত খাদ্য, রান্নার তেল, ডাল, মসলা, দুগ্ধজাত পণ্য ও রান্নাঘরের বিভিন্ন সরঞ্জামের ওপর তারা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিচ্ছে।
বেসরকারি খুচরা বিক্রেতাদের বাইরে সরকার-সমর্থিত সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলোও মূল্য ছাড়ের এই প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে। হাজার হাজার পণ্যের দাম তারা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। যেমন দুবাইভিত্তিক ইউনিয়ন কোঅপ জানিয়েছে, পবিত্র মাসে তারা চার হাজার পণ্যে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দেবে। এ ছাড়া দুই হাজার পণ্যের দাম স্থির থাকবে।
শারজাহ কো-অপারেটিভ সোসাইটি সাড়ে ৩ কোটি দিরহাম বরাদ্দ দিয়েছে, যাতে ১০ হাজার পণ্যের দাম কমানো যায়। এসব পণ্যের ৮০ শতাংশই হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য। রান্নার তেল, ময়দা, চালের মতো পণ্যে তারা ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিচ্ছে।
এখানেই শেষ নয়। এই মাসের প্রতি সপ্তাহে তারা ক্রেতাদের দুটি সুজুকি ডিজায়ার গাড়ি দেবে। এর পাশাপাশি থাকবে পাঁচ হাজার দিরহাম দামের ৩০টি গিফট কার্ড। বিজয়ীরা পাবেন আসবাব। আরও থাকবে এক হাজার দিরহামের শপিং কার্ড। যারা পণ্য কিনতে ৩০০ দিরহাম বা তার চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করবেন, তারা এই সুবিধা পাবেন।
অ্যামাজন দিচ্ছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। যেসব পণ্যে এই সুবিধা পাওয়া যাবে, তার মধ্যে রয়েছে তাজা পণ্য এবং ঘরোয়া, রান্নাঘর, সৌন্দর্য, ফ্যাশন ও ইলেকট্রনিকস সামগ্রী। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্যে এসব সুবিধা মিলবে। এমনকি অ্যামাজনের যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য শাখা থেকেও পণ্য কেনা যাবে।
অ্যামাজনে কেনাকাটা করে ক্রেতারা তাজা ফল ও সবজিতে ৭০ শতাংশ, রান্নার প্রয়োজনীয় পণ্য ৪২ শতাংশ, ডিজিটাল এয়ার ফ্রাইয়ারে ৫০ শতাংশ, কফি মেশিনে ৪৬ শতাংশ, গ্যাস কুকারে ৩১ শতাংশ, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপে ৪১ শতাংশ এবং টেলিভিশন কিনতে ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ সাশ্রয় করতে পারেন।
অন্যদিকে নুন ডট কমে বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ। আর মায়া সুপার মার্কেট দিচ্ছে দেশব্যাপী নানা রকম ছাড়।
আল মায়া গ্রুপের পরিচালক কামাল ভাচানি বলেন, ‘তিনটি ভাগে আমরা সুবিধা দিচ্ছি। রমজানের আগে আহলান রামাজান, রামাজান কারিম ওয়ান এবং রামাজান কারিম টু। পাঁচ শতাধিক পণ্যে সব ধরনের ক্রেতাদের জন্য আমরা সুবিধা দিচ্ছি। বিপুল মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি আছে সাশ্রয়ী মূল্য। রমজানের আগের সুবিধা চালু হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। সব মিলিয়ে ৪৫ দিন ধরে চলবে এই বিশেষ সুবিধা।’