বর্ষা এখনও শুরু হয়নি। তবু গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্যমিশ্রিত স্যুয়ারেজের দুর্গন্ধ পানির উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে ঢাকার রাস্তার ড্রেনে। এটা নিয়ে নাগরিক ভোগান্তি এখন চরমে। স্যুয়ারেজের নোংরা ময়লা পানি নিয়মিতই দেখা যায় রাস্তার দুই পাশে। এমতাবস্থায় অনেককেই দেখা যাচ্ছে গায়ের জামা বাঁচিয়ে পথ চলতে। বিশেষ করে নামাজি ও অফিসগামীদের।
এখন প্রশ্ন হলো, স্যুয়ারেজের নোংরা ময়লা কিংবা ড্রেনের পানি বৃষ্টির পানির ছিটার সঙ্গে কাপড়ে লাগলে ওই কাপড় গায়ে নামাজ হবে কিনা? এ সব পানি পাক না নাপাক?
ঢাকার রাস্তার বিভিন্ন চিত্র নানা সময় ঘুরে দেখা গেছে যে, যেখানে সরাসরি নাপাক দেখা যায় কিংবা নাপাক ড্রেনের পাশে রাস্তা হয়, আর সেই দৃশ্যমান নাপাক রাস্তায়ও চলে আসে। তাহলে এমন রাস্তায় পতিত পানির ছিটা নাপাক। ওই পানি গায়ে বা কাপড়ে লাগলে তা ধুতে হবে।
তবে অবস্থা যদি এমন হয় যে, প্রতিদিনই এমন হতে থাকে। আর এসব থেকে বাঁচা তার জন্য কষ্টসাধ্য। কাপড় পাল্টানো বা ময়লা দূর করা কষ্টকর, সেই সঙ্গে নাপাকও দেখা যায় না, বরং শুধু পানির ছিটা অনুভব হয় কাপড় ভেজা দেখায়- তাহলে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মাফ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ তার কাপড় নাপাক বলা যাবে না।
কিন্তু হঠাৎ এমন হলে অথবা এ রাস্তার নিয়মিত যাত্রী না হলে তাকে ওই নাপাক দূর করেই পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।
ইসলামের বিধান হলো- মোজা, জুতা অথবা চামড়ার তৈরি অন্যান্য জিনিস যদি নাপাক হয়ে যায় আর নাপাকি যদি ঘন হয় যেমন- গোবর, পায়খানা, রক্ত, বীর্য প্রভৃতি; তাহলে নাপাকি ঘষে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর নাপাকি যদি তরল হয় এবং শুকিয়ে গেলে দেখা না যায়- তাহলে না ধুলে পাক হবে না। তা ধুয়ে ফেলার নিময় হলো- প্রত্যেকবার ধৌত করার পর এতটা বিলম্ব করতে হবে যেন পানি টপকানো বন্ধ হয়ে যায়। এভাবে তিনবার ধৌত করতে হবে।
কাপড়ে নাপাকি লাগলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এবং প্রতিবার ভালো করে চাপ দিয়ে নিংড়াতে হবে। ভালো করে নিংড়িয়ে ধৌত করার পরও যদি দুর্গন্ধ থেকে যায় কিংবা দাগ থাকে, তাতে কোনো দোষ নেই, পাক হয়ে যাবে।
কাপড়ে যদি বীর্য লাগে এবং শুকিয়ে যায়, তাহলে আঁচড়ে তুলে ফেললে অথবা রগড়ে মর্দন করে তুলে ফেললে পাক হয়ে যায়। আর যদি বীর্য শুকনো না হয়, তাহলে তিনবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কাপড় পাক হয়ে যায়। প্রস্রাব করে পানি নেওয়ার পর যদি বীর্য বের হয়, তাহলে আবার ধুয়ে ফেলতে হবে।
পানির মতো যেসব জিনিস তরল এবং যদি তৈলাক্ত না হয়, তাহলে তা থেকে কাপড়ে লাগা নাপাকি ধৌত করলে পাক হয়ে যায়।
প্রবাহিত পানিতে কাপড় ধোয়ার সময় নিংড়ানোর দরকার নেই। কাপড়ের এক দিক থেকে অন্য দিকে পানি চলে গেলেই যথেষ্ট।
কাপড় যদি এমন হয় যে চাপ দিয়ে নিংড়াতে গেলে তা ফেটে যাবে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিতে হবে। তারপর হাত দিয়ে অথবা অন্য কিছু দিয়ে এমনভাবে চাপ দিতে হবে যেন পানি বেরিয়ে যায় এবং কাপড়ও না ফাটে।
নাপাক তেল, ঘি বা অন্য কোনো তেল যদি কাপড়ে লাগে, তাহলে তিনবার ধুয়ে দিলে কাপড় পাক হয়। যদিও তেলের তৈলাক্ততা কাপড়ে রয়ে যায়। তেলের সঙ্গে মিশ্রিত নাপাকি তিনবার ধৌত করলে পাক হয়ে যায়।
নাপাক রঙে রং করা কাপড় পাক করার জন্য এতবার ধুতে হবে যেন পরিষ্কার পানি আসতে থাকে। তারপর রং থাক বা না থাক কাপড় পাক হয়ে যাবে।