মাস্ক বলেছেন ‘ভ্যাম্পায়ার’ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের অর্থ!

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2025-02-23 13:07:24

আমেরিকায় বড় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ধনকুবের শিল্পপতি ইলন মাস্ক। যা কল্পনাকেও হার মানায়। ইলন মাস্কের এমন দাবির পরপরেই দেশটিতে তুমুল হইচই শুরু হয়েছে।

দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার ‘কিচেন ক্যাবিনেট’-এর সদস্যপদ পেয়েছেন এক্স হ্যান্ডেল, স্পেস এক্স এবং টেসলা অধিকারি মাস্ক। সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। পাশাপাশি সরকারের খরচ কমাতে ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই প্রধান করা হয়েছে তাকে।

এ দায়িত্ব পাওয়া পরপরেই বিগত সরকারের আমলে নানা অনিয়মের খবর সামনে আনছেন ইলন মাস্ক। সম্প্রতি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সরকারি তথ্যে খোঁজ নিতেই দেখা বিরাট গরমিলের। ওই তথ্যে দেখা গেছে, ১০০ থেকে ৩০০ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মাসে মাসে কোষাগার থেকে দেওয়া হচ্ছে মোটা অর্থ! আর তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে এক্সে পোস্ট করেছেন তিনি।

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মাস্ক লিখেছেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তার সুবিধা যারা পাচ্ছেন, তাদের বয়স এবং মৃত্যুর তথ্যের ক্ষেত্রে প্রচুর গোঁজামিল রয়েছে। আর এ সব দেখে মনে হচ্ছে ‘টোয়াইলাইট’ বাস্তব। যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বহু রক্তচোষা বাদুড়েরাই সামাজিক নিরাপত্তার কর্সসূচির অর্থ নিচ্ছেন।’

২০০৫ সালে প্রকাশিত হয় মার্কিন সাহিত্যিক স্টিফেনি মেয়ারের কাল্পনিক প্রেমের উপন্যাসের সিরিজ় ‘টোয়াইলাইট’ বা গোধূলি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রয়েছে বেলা সোয়ান নামের এক তরুণী এবং তাঁর ১০৪ বছর বয়সি প্রেমিক রক্তচোষা বাদুড় এডওয়ার্ড কালেন। পরে এই উপন্যাস নিয়ে হলিউডে তৈরি হয় একাধিক চলচ্চিত্র। দারুণ জনপ্রিয়তা পায় রক্তচোষা উপন্যাস এবং সিনেমাটি।

‘টোয়াইলাইট’-এর কথা বলার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার সরকারি তথ্য সংক্রান্ত একটি নথির ছবিও প্রকাশ করেন মাস্ক। এতে দেখা গেছে, সরকারি টাকা পাচ্ছেন শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়া অন্তত দু’কোটির বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এদের মধ্যে ১৩০ থেকে ১৩৯ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৩৯ লাখ। এ ছাড়া ১৪০ থেকে ১৪৯ বছরের ৩৫ লাখ এবং ১৫০ থেকে ১৫৯ বছরের ১ লাখ ৩০ হাজার। এমনকি ২০০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই টাকা পাচ্ছেন বলে আমেরিকার সরকারি নথিতে উল্লেখ রয়েছে।

২০২০ সালে জন শুমারি করে যুক্তরাষ্ট্র। মাস্কের যুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথির তথ্য তার সঙ্গে একেবারেই মেলে না। কারণ রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে শতায়ুর সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার। অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তিদের নামেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা তোলা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মাস্ক।

যদিও মাস্কের দেওয়া তথ্যকে ‘অতিরঞ্জিত’ এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের ‘ভুল ব্যাখ্যা’ বলে দাবি করেছে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। সংবাদ সংস্থাটির প্রতিবেদনে অবশ্য, টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ত্রুটিবিচ্যুতি হওয়ার কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।

এপি জানিয়েছে, গত বছরের জুলাইতে সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের সরকারি খরচ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন। সেখানে বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এর গ্রাহকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে ৮ কোটি ৬ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১ কোটি ৮০০  ডলার ভুল ভাবে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, ত্রুটির পরিমাণ এক শতাংশেরও কম। তবে কোনও মৃত ব্যক্তিকে টাকা দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা পেয়েছেন বলে দাবি করেছে এপি।

সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভুল ভাবে বিতরণ করা ৩ কোটি ১০ লক্ষ ডলার কোষাগারে ফেরাত এসেছে। এর জন্য একটি পাইলট প্রকল্প চালায় মার্কিন প্রশাসন। সামাজিক নিরাপত্তা প্রাপক মৃতদেহ তালিকার অস্থায়ী অ্যাক্সেস পান ট্রেজ়ারির কর্তাব্যক্তিরা। ১৮৯৯ সাল থেকে সেখানে ১৪ কোটি ২০ লাখ গ্রাহকের তথ্য সেখানে নথিবদ্ধ রয়েছে।

এর আগে সামাজিক নিরাপত্তার সরকারি তথ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত সফ্‌টঅয়্যার নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদ সংস্থা ‘ওয়্যারড’। সেখানেও ‘কোবোল’ প্রোগ্রামিংয়ের একাধিক ঘাটতির কথা বলা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তারপরও এই সিস্টেমটিকে বাতিল করেনি যুক্তরাষ্ট্র সরকার।

মাস্কের ওই পোস্টের পর সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন এই সরকারি দফতরের মহাপরিদর্শক। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে মৃত গ্রাহকদের নাম-ঠিকানা নথিবদ্ধ করতে কোনও অতিরিক্ত সিস্টেম আনা হয়নি। ফলে ১৯২০ সাল বা তার আগে জন্মগ্রহণকারীদের অনেকেরই নাম ওই তালিকায় থেকে গেছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, মৃতদেরও সরকারি অর্থ দেওয়া হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন ওঠে এসব জেনেও কেন তথ্যভান্ডার সংশোধন এবং সঠিক করতে উদ্যোগী হচ্ছে না মার্কিন প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের মহাপরিদর্শক জানান, তথ্যভান্ডার সংশোধন করতে চাই নতুন সফ্‌টঅয়্যার। এর জন্য খরচ হবে ৯০ লাখ ডলার। সেটা এই মুহূর্তে করতে রাজি নয় সরকার।

মাস্ক অবশ্য এই যুক্তি উড়িয়ে দিয়ে এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এতে একাধিক রাঘব বোয়ালের নাম উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট খুব দ্রুত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টেবলে পৌঁছে দেবেন টেসলা কর্তা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর