ডলারের দাম কমানোর সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। সদ্য বিদায়ী নভেম্বর মাসে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা ১৯৩ কোটি ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২১ হাজার ১৮১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (প্রতি ডলার সমান ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা হিসেবে)। এর আগের মাসে (অক্টোবর) ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা।
রোববার (৩ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। এ খাতের ৪১টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৭২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার। যা এক মাসে পাঠানো মোট রেমিট্যান্সের ৮৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এ সময়ে ৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারের সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছে। আর দেশে কার্যরত বিদেশি ৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে ৫৯ লাখ ডলার।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমিউনিটি ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক গত মাসে রেমিট্যান্স আহরণ করতে পারেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠায়নি প্রবাসীরা। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং স্টেট ব্যাংক অ ইন্ডিয়া নভেম্বরে দেশে প্রবাসী আয় আনতে পারেনি।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, সংকট কাটাতে লোকসান দিয়ে বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে ব্যাংকগুলো। প্রবাসী আয়ে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকগুলো বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি দামে ডলার কিনতে পারছে। এখন বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স আসলে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা মিলছে। ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১১৫ টাকার মতো।
এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিট্যান্স এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার। এরপর টানা দুই মাস প্রবাসী আয় কমেছিলো। ডলার সংকটের কারণে গত আগস্ট মাসে এসেছিলো ১৬০ কোটি ডলার। আর সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী আয়ে বড় হোঁচট খায়। ওই মাসে গত সাড়ে ৩ বছর বা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় আসে বাংলাদেশে, যা পরিমাণে ১৩৪ কোটি ডলার। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপর অক্টোবর মাসে এসেছিলো ১৯৭ কোটি ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশে ডলার সংকট দেখা দেয়। সেই থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার-সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৫ মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতে ৬ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়নের বেশি। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে রিজার্ভ থেকে কমছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়।