c বিভিন্ন সময় তাঁর প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে বাছাই করা কয়েকটি প্রতিবেদনের বাংলা ও ইংরেজি সংস্করন নিয়ে বইটি সংকলন করা হয়েছে।
বই ও সাংবাদিকতা নিয়ে মো. মহিউদ্দিনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ।
বার্তা২৪.কম: আপনি তো দীর্ঘ সময়ের সাংবাদিকতায় অনেক প্রতিবেদন করেছেন, বইয়ের জন্য ৭টি প্রতিবেদন কিভাবে বাছাই করেছেন?
মো. মহিউদ্দিন: প্রায় দুই দশকের সাংবাদিকতায় বিভিন্ন বিটে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে।এর মধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দিকে বাড়তি ঝোঁকটা ছিল সবসময়।নিয়মিত কাজের মধ্যে অভিবাসন খাত আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে।বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী বাস করেন।তারা এ দেশের অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য শক্তি। তাই অভিবাসীদের কল্যাণ, তাদের সমস্যা, ভোগান্তি নিয়ে নিয়মিত খোঁজ নেওয়া আমার কাজের অংশ। অভিবাসন খাত নিয়ে করা সাম্প্রতিক সময়ের দীর্ঘ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো বেছে নিয়েছি সংকলনের সময়। এর কয়েকটি বিভিন্ন সময় পুরষ্কৃত হয়েছে। আলোচিত প্রতিবেদন থেকে গুণগত মানের বিচারেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে।
বার্তা২৪.কম: বইয়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দীর্ঘ অনুসন্ধান দেখা গিয়েছে। এটি করতে গিয়ে কেমন সময় লেগেছে, কোনো বাধা ছিল?
মো. মহিউদ্দিন: মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে নিয়মিত অভিযোগ ছিল। একাধিকবার এটি বন্ধও হয়েছে। তা ই সবশেষ ২০২২২ সালে এটি চালুর সময় নিবিড় নজরাদারিতে রাখি। ২০২৪ সালে এটি আবার বন্ধের ঘোষণার পর শুরু করি অনুসন্ধান। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এটি নিয়ে কাজ করি। এ অনুসন্ধানের গল্পটাও সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করেছি বইয়ে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের সময় নানা রকমের বাধা বিপত্তি ছিল। বিশেষ করে শ্রমবাজার নিয়ে গড়ে ওঠা চক্রের হোতারা প্রতিবেদনটি আটকে দেওয়ার নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিল। কিন্তু প্রথম আলোর সাহসী সাংবাদিকতার নীতি আমাকে এগিয়ে দিয়েছে। দুটি দীর্ঘ প্রতিবেদন নিয়ে সিরিজ প্রকাশিত হয়েছে। এটি ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়। সরকার সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে ব্যবস্থা নিতে। সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা চক্রের হোতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এ ছাড়া পরে মালয়েশিয়ার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সঙ্গে মিলে আরও দুটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন করেছি। এটি অবশ্য এ বইতে রাখা হয়নি।
বার্তা২৪.কম: অভিবাসন খাতে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন, অভিবাসীরা কি ধরণের সমস্যায় পড়েন?
মো. মহিউদ্দিন: বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি তরুণ কর্মসংস্থানের জন্য তৈরি হন।এখানে চাকরির ঘাটতি আছে। বেকারত্ব দূর করতে অনেকেই বিদেশে যেতে চান।নিজের ও পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে তারা উন্নত দেশে পাড়ি জমাতে চান। এতে করে তারা দালাল বা মধ্যস্বত্তভোগীর প্রলোভনে পড়েন। বিদেশে কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়ায় দালালেরা জড়িত থাকেন।বিদেশে যেতে গিয়ে শুরু থেকেই প্রতারিত হন কর্মীরা। তাদের বাড়তি অর্থ খরচ হয়। অনেকেই জমি বিক্রি করে, সুদে ঋণ নিয়ে এ টাকা পরিশোধ করেন। তাই বিদেশে গিয়ে কাজ না পেলে পরিবারটি অসহায় হয়ে যায়।প্র তি বছর অনেক কর্মী শুন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন। অবৈধ উপায়ে বিদেশে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন।আবার ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিতে গিয়ে মারা যান কেউ কেউ। তবে ধীরে ধীরে এ খাতের উন্নতি হচ্ছে।
বার্তা২৪: বইটি অভিবাসন খাত নিয়ে হলেও বিদ্যুৎজ্বালানি খাতের দুটো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দেখলাম, এটি যুক্ত করার পেছনে কি চিন্তা কাজ করেছে?
মো. মহিউদ্দিন: অভিবাসন খাতের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমার নিয়মিত কাজের জায়গা। গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও নতুন সযোগ তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মিটার ক্রয় ও এলএনজি আমদানি নিয়ে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে চক্রের খোঁজ পাই। এ দুটো বিষয়ে করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দুটিও পাঠকের জন্য এই বইতে যুক্ত করা হয়েছে। এতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন নিয়ে সংকলিত বইয়ে বৈচিত্র্য এসেছে বলে বিশ্বাস করি। সব মিলে বইটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পাঠে ভূমিকা রাখতে পারে।
বার্তা২৪.কম: আপনাকে ধন্যবাদ
মো. মহিউদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ