বাংলাদেশের মানুষ আর ক্রীতদাসের হাসি হাসবে না: রিজভী
বাংলাদেশের মানুষ আর ক্রীতদাসের হাসি হাসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রোববার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা জন্মের পর থেকে বাংলাদেশে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, গোলমাল, সংঘাত, সহিংসতার কথা শুনিনি। যা হয়েছে তা হয়তো সামান্যতম। কিন্তু যেটা হয়েছে সেটা আগে হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলেই হয়েছে। সেটাকে কিন্তু তারা (ভারত) আমলে নেয়নি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের বর্তমান বয়ান মিথ্যার ধোঁয়াজাল দিয়ে ঘেরা। ভারত অন্তর্গত দিক থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এদের মধ্যে মানবিক নৈতিকতার ছিঁটেফোঁটাও নেই। এই কারণে বাংলাদেশের মানুষের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বাভাবিক বিকাশে বিশ্বাসী দেশের জনগণ ও জাতীয় নেতাদের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ঐতিহাসিক কাল ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় প্রীতি ও শুভেচ্ছার বন্ধনে আবদ্ধ। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভঙ্গের কোন কারণের অভ্যুদয় হয়নি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে হাইপার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার জন্য ভারত উঠেপড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ থেকে দুঃশাসনের অবসান হওয়া, হাসিনার পালিয়ে যাওয়া ইত্যাদি তাদের মনে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশকে লাঞ্ছিত করতে, দুর্দশায় ফেলতে, অবমাননা করতে চলছে অতিকথন আর অপপ্রচারের বিরতিহীন ধারাভাষ্য। তথাপিও যাবতীয় ভয়, হুমকি ও দুর্বিপাকের মধ্যেও বাংলাদেশিরা মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্পে সব চক্রান্তকে প্রতিহত করবে।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও এদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু বসবাস করে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং চাকমা, মারমা, গারো, মুরংসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আবহমানকাল ধরে একটা দৃঢ় ও নিবিড় যোগসূত্র বয়ে এনেছে। তারা এক সাথে মিলে মিশে পারস্পরিক সহাবস্থান ও সহমর্মী হয়েই শান্তিতে বসবাস করছে। এখানে এক দেশ, এক জাতি, আমরা সবাই বাংলাদেশি।
অথচ, ভারত সব বাংলাদেশিদের স্বার্থে কথা না বলে, সব সময় শুধুমাত্র একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কথা বলে। ভারতের এই আচরণ ভারতকে সার্বজনীন না করে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বী করেছে। ভারতের এসব আচরণ এদেশের সাধারণ মানুষ মেনে নেয়নি। এদেশের মানুষ কঠিন সময়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে জানে। প্রতিরোধের দূর্ভেদ্য দেয়ালও প্রতিষ্ঠা গড়ে তুলতে পারে। এদেশের হিন্দুদেরও বৃহদাংশ ভারতের এই নীতি সমর্থন করে না। আজ এই বাস্তবতা ভারতকে বুঝতে হবে। অসূয়া শক্তির কখনো জয় হতে পারে না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কেউ তাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে বিএনপি প্রতিবন্ধক বলে প্রচার করছেন যা সঠিক নয় জানিয়ে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকারের। বিএনপি'র ওপর দায় চাপানো দুঃখজনক। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াত নিষিদ্ধ করেছিল তখন আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা আশা করব অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টাদের এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত হবে না যাতে গণতন্ত্রিক শক্তি দুর্বল হয় বা আমাদের ঐক্যে ফাটল ধরে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছেন, জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিন। জনগণকে আস্থায় রাখুন। জনগণের আস্থায় থাকুন। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর স্বৈরাচার বিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। সরকারের কোনো কাজ কিংবা কথা যেন ছাত্র-জনতার ঐক্যে ফাটল ধরার কারণ না হয়, সেই বিষয়ে সরকারকে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।