জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়ায় ফের উৎপাদন বন্ধ করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ মোসলে উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
এর আগে গতকাল বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে কারখানা কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।
জানা যায়, গ্যাস সংকটের কারণে ১৩ মাসের বেশি দিন উৎপাদন বন্ধ থাকে যমুনা সার কারখানার। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গ্যাস সংযোগ পেয়ে উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর ১৪ দিনের মাথায় বুধবার রাত ৭টার পর অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের ভাল্বে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে রাতেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় যমুনা সার কারখানা কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
এ প্রসঙ্গে যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আ.স.ম মোসলে উদ্দিন বলেন, ‘অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের ভাল্বে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় বুধবার রাতে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত কাজ চলছে। আশা করছি অতি শীঘ্রই ত্রুটিপূর্ণ ভাল্বটি মেরামত করে পুনরায় উৎপাদনে ফিরব।’
‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবনকে পরিবর্তন করেছে গ্রাম আদালত’
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
|
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
‘গ্রাম আদালত’ একটি সরকারী সেবা। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পটি চালু করে। প্রকল্পটি শুরুর পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ন্যায়বিচার সহজলভ্য করে লাখ লাখ মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব বলেন বক্তারা। ঢাকা বিভাগ-এর অতিরিক্তি বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) কে এম আলী আযম এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সন্মেলনে প্রায় ৩৭০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় সম্মেলনের বিশেষ অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, গ্রাম আদালত বিচারিক সেবার একটি কার্যকর মাধ্যম, যা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং স্থানীয় সরকার, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এ প্রকল্পে সহযোগিতায় জন্য ধন্যবাদ জানান।
বিশেষ অতিথি উপ-আবাসিক প্রতিনিধি সোনালী দায়ারাত জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে বাংলাদেশ সরকারের নেয়া উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীরা স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছেন। পাশাপাশি গ্রাম আদালত উন্মুক্ত বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করছে।
অতিরিক্ত সচিব এ. কে. এম. তারিকুল আলম বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত জেলা প্রশাসক, উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার (ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ) ৮৯টি উপজেলায় প্রকল্পটির স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর সেবা গ্রহণে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের নেতৃত্ব ও ভূমিকা প্রশংসনীয়।
সম্মেলনে ২ জন উপকারভোগী (১ জন নারী, ১ জন পুরুষ) গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গ্রাম আদালত ব্যবস্থায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এছাড়া ২ জন যুব প্রতিনিধি গ্রাম আদালত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্থানীয়ভাবে বিরোধ নিষ্পত্তিতে গ্রাম আদালতের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
বক্তারা প্রকল্প এলাকাসহ দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম আদালতগুলোকে আরো সক্রিয় করতে জেলা উপজেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিতকরণ ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। একইসঙ্গে তারা গ্রাম আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে চেয়ারম্যানদের অনুকরণীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার ওপরও জোর দেন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চেয়ারম্যানরা গ্রাম আদালতের কার্যকরীকরণে গ্রাম আদালতের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্প স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং অন্যায়ের প্রতিকার লাভের লক্ষ্যে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষত: নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্য কাজ করছে। প্রকল্পটি বর্তমানে এর ৩য় পর্যায়ে দেশের ৮টি বিভাগের ৬১ জেলার (পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা ব্যতিত) ৪৬৮ উপজেলার ৪,৪৫৩ টি ইউনিয়নে গ্রামীণ জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করছে। এছাড়াও প্রকল্পটি এর ১ম ও ২য় পর্যায়ে দেশের ১,৪১২টি ইউনিয়নের ২৫ লাখেরও বেশি স্থানীয় লোকজনকে (১৯,৫৩,০০০ নারী) বিচারিক সুবিধা পেতে সাহায্য করেছে।
কোর্ট রিপোর্টাস এসোসিয়শনের নেতৃত্বে জাকারিয়া-মিজান
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম, ঢাকা
|
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
ঢাকা কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৫-২০২৬ সালের কার্যকরী কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে মোঃ জাকারিয়া হায়দার ও সেক্রেটারি পদে মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বিজয়ী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার জেলা জজ আদালতের পুরাতন ভবনের নিচতলায় কোর্ট রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সাধারণ সদস্যদের ভোটে তারা নির্বাচিত হন।
অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে এম এ জলিল উজ্জল, সহ-সভাপতি পদে মাহবুব হাসান রানা, সিনিয়র সহ সাধারণ সম্পাদক পদে মুহাম্মদ ওয়াহিদুন নবী বিপ্লব, সহ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজিজুর রহমান শাহ, ট্রেজারার মোঃ শাহ আলম সোহাগ, দফতর ও প্রচার সম্পাদক কে, এম খায়রুল কবীর নির্বাচিত হয়েছেন।
সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুল্লাহ আল মনসুর, মোঃ গাফফার হোসেন ইমন, মোঃ রবিউল ইসলাম রবি, মোঃ তরিকুল ইসলাম ও মুহাম্মদ লুৎফর রহমান। এছাড়া উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যরা হলেন- মোঃ শাহজাহান খান, সৈয়দ আহমেদ গাজী, মোঃ মুনজুর আলম (মুনজু),আশরাফ উল আলম, মোঃ এমদাদুল হক লাল, মোঃ আবুল কালাম আজাদ।
ঢাকা কোর্ট রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোঃ এমদাদুল হক লাল এদিন সন্ধ্যায় এ ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় অপর দুই কমিশনার মোঃ আনোয়ারুল কবীর বাবুল ও মো: হাফিজ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সীরাত মঞ্জুর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
|
ছবি: বার্তা২৪.কম
জাতীয়
চট্টগ্রাম কলেজের সড়ক ধরে চকবাজার থেকে সামনের দিকে এগোলে তিন রাস্তার মোড়ের কাছে এসে চোখে পড়বে একটি পুরনো অথচ পরিচিত স্থাপনা চট্টগ্রামের গণি বেকারি। এতেই মনে পড়বে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বেলা বিস্কুটের কথা, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক অমলিন অংশ হয়ে আছে। চন্দনপুরার সরু গলিপথ, পুরনো দিনের বাড়ি আর বাতাসে মিষ্টি ঘ্রাণ; সবই যেন বেলা বিস্কুটের গল্প বলে।
বেলা বিস্কুট শুধু একটি খাবার নয়, এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, আবেগ এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। চট্টগ্রামের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে এতটা গভীরভাবে জড়িয়ে আছে, একে ছাড়া শহরের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। এটি শুধু মিষ্টি ও মসলাদার স্বাদের জন্যই নয়, বরং চট্টগ্রামের মানুষের ঐতিহ্য এবং ইতিহাসের এক অমূল্য অংশ।
চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী খাবার বেলা বিস্কুট
ঐতিহ্যের যাত্রা: বেলা বিস্কুটের শুরুর গল্প বেলা বিস্কুটের উৎপত্তি চট্টগ্রামের চন্দনপুরা অঞ্চল থেকে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এর উদ্ভাবক ছিলেন বেলায়েত আলী নামক এক রন্ধনশিল্পী, যিনি মিষ্টি, মসলাদার বিস্কুট তৈরি করার বিশেষ কৌশল আবিষ্কার করেছিলেন। তবে কিছু ইতিহাসবিদ বলেন, ব্যবসায়ী আব্দুল গণি সওদাগর ছিলেন বেলা বিস্কুটের প্রবর্তক। তিনি নিজের পানসি নৌকায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে বিস্কুট ছড়িয়ে দিয়ে এটি জনপ্রিয় করেছিলেন। গণি সওদাগরের হাত ধরেই বেলা বিস্কুট আজ চট্টগ্রামের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেছে।
ব্যবসায়ী আব্দুল গণি সওদাগর ছিলেন বেলা বিস্কুটের প্রবর্তক
কোনভাবেই হোক, বেলা বিস্কুটের ইতিহাস চট্টগ্রামের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। চট্টগ্রামের লোকজনের কথা, তাদের আবেগ, স্মৃতি এবং ঐতিহ্য সব কিছুই যেন এক টুকরো বিস্কুটের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে।
চট্টগ্রামের প্রতিদিনের সঙ্গী বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের আড্ডা, নাশতা কিংবা অতিথি আপ্যায়নে বেলা বিস্কুটের উপস্থিতি অপরিহার্য। এক সময়, বাড়ির উঠানে চায়ের সঙ্গে এই বিস্কুট না থাকলে মনে করা হতো, অতিথি আপ্যায়ন পূর্ণ হয়নি। এই বিস্কুটটি চট্টগ্রামের আড্ডার অংশ হয়ে উঠেছে, যেখানেই হোক, চা-সঙ্গে থাকা উচিত বেলা বিস্কুট। বিশেষ করে প্রেস ক্লাবের আড্ডা থেকে শুরু করে স্কুলের টিফিন, দোকানের চায়ের কাপ-সবখানেই বেলা বিস্কুট ছিল এবং আজও আছে। স্থানীয়রা প্রায়ই বলে থাকেন, বেলা বিস্কুট ছাড়া চট্টগ্রামের আড্ডা জমে না!
এটি চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী খাবার। স্থানীয় বাসিন্দারা বেলা বিস্কুটের স্বাদে এমন এক মিষ্টি মোলায়েমতা খুঁজে পায়, যা তাদের প্রাচীন স্মৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এক টুকরো বেলা বিস্কুট যেন চট্টগ্রামের সংস্কৃতির অমূল্য এক অংশ, যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ঐতিহ্যকে জীবিত রেখেছে।
বিস্কুট তৈরির রহস্য বেলা বিস্কুটের মিষ্টি এবং মসলাদার স্বাদ তার বিশেষ রেসিপি ও প্রস্তুত প্রণালী থেকে আসে। এই বিস্কুটের উপাদানগুলো যদিও বেশ সাধারণ, তবুও প্রস্তুত প্রণালী খুবই বিশেষ। মূল উপকরণগুলো হলো: গমের ময়দা, চিনি বা গুড়, ঘি বা তেল, বেকিং সোডা, বিশেষ মসলা (যা সাধারণত গোপন রাখা হয়)।
এদের সঠিক মিশ্রণ আর প্রস্তুত প্রণালীই বেলা বিস্কুটের গুণমান নির্ধারণ করে। ময়দা, চিনি, ঘি এবং মসলাকে একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় মণ্ড। এরপর এই মণ্ডটিকে বিশ্রামে রেখে তন্দুরে বা মাটির চুলায় বেক করা হয়। তন্দুরের তাপমাত্রায় বাইরের অংশ শক্ত হয়ে যায়, কিন্তু ভেতরটা থাকে তুলতুলে, যা বেলা বিস্কুটকে একদম আলাদা করে তোলে।
গণি বেকারির ভূমিকা চট্টগ্রামের গণি বেকারি বেলা বিস্কুটের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বেকারিটি প্রথম বেলা বিস্কুট তৈরি করে এবং সেটি ছিল চট্টগ্রামের প্রথম বেলা বিস্কুট। প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল গণি সওদাগরের হাত ধরে এই বেকারির যাত্রা শুরু হয়, এবং আজও এটি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে বেলা বিস্কুট তৈরি করছে। যা বর্তমানে বংশপরম্পরায় চতুর্থ প্রজম্নের হাতে রয়েছে।
Caption
বর্তমান স্বত্তাধিকারী আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ এহতেশাম বলেন, আমার বড় দাদা আব্দুল গণি সওদাগরের বেকারিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পূর্বপুরুষের ধারাবাহিকতায় এটি চালু করেন। ১৮৭০ সালের দিকে গণি বেকারি থেকে বেলা বিস্কুটের যাত্রা শুরু হয়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাদা দানু মিয়া সওদাগর, বাবা জামাল উদ্দিন খান সাহেবের হাত ধরে এটি এগিয়েছে। বর্তমানে আমি এই ঐতিহ্য বহন করছি। এই বিস্কুট চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।
কাদামাটির তন্দুরে বেলা বিস্কুটের প্রস্তুতি গণি বেকারির পেছনেই রয়েছে বিস্কুট তৈরির এক পুরোনো কারখানা, যেখানে এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে বেলা বিস্কুট তৈরি করা হয়। পুরনো কাদামাটির তন্দুরে বিস্কুট সেঁকা হয়, যেখানে আধুনিক প্রযুক্তির বদলে প্রাচীন সময়ের মতই খামি সাজিয়ে তন্দুরের ভেতর রাখা হয়। এই পদ্ধতিতে বিস্কুট তৈরি করতে প্রায় দুই দিন সময় লাগে। প্রথমে ময়দা, চিনি, লবণ, ভোজ্যতেল, ডালডা, গুঁড়া দুধ ও বিশেষ একধরনের মসলা দিয়ে খামি তৈরি করা হয়। পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রস্তুত করা এই খামিতে ইস্টের বদলে বিশেষ মাওয়া ব্যবহৃত হয়, যা বিস্কুটের স্বাদে এনে দেয় এক অনন্য বৈচিত্র্য।
প্রস্তুত প্রণালীই বেলা বিস্কুটের গুণমান নির্ধারণ করে
এই খামি মিশিয়ে একদিন রেখে দেওয়া হয়, এবং পরবর্তীতে তন্দুরে প্রথম দফায় সেঁকা হয় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা সময় ধরে। এরপর, দ্বিতীয় দফায় আরও সেঁকে তৈরি করা হয় বেলা বিস্কুট। প্রথমে কাঠ ব্যবহার হলেও এখন গ্যাস এবং কয়লা দুইই ব্যবহৃত হয়।
বিক্রি ও জনপ্রিয়তা: গণি বেকারির বেলা বিস্কুটের আধিপত্য গণি বেকারির বেলা বিস্কুটের চাহিদা কখনোই কমেনি। প্রতিদিন এখানকার বিভিন্ন বয়সী ক্রেতা তাদের পছন্দের বেলা বিস্কুট নিতে আসে। এখানে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ প্যাকেট বা ৬ থেকে ৮ হাজার পিছ বেলা বিস্কুট প্রস্তুত করা হয়। গণি বেকারির বেলা বিস্কুটের মধ্যে দুটি প্রধান ধরনের পাওয়া যায়—মাখন বেলা এবং রোজ বেলা। মাখন বেলার দাম কিছুটা বেশি, ৩০ পিসের দাম ১৫০ টাকা, এবং ৪৫০ গ্রামের সাধারণ রোজ বেলার দাম ১১০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
দেশ গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে বেলা বিস্কুটের বিস্তার একসময় বেলা বিস্কুট শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ছোট ছোট দোকানে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এটি চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পৌঁছে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেলা বিস্কুট কিনে নস্টালজিয়ায় ডুবে যান। এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করেছে।
কেন এত জনপ্রিয়? বেলা বিস্কুটের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ তার স্বাদ এবং আকার। এই বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার জন্য একদম আদর্শ। তার বড় আকৃতি, শক্ত বাইরের আবরণ এবং নরম ভেতরের মিশ্রণই একে অন্য সব বিস্কুট থেকে আলাদা করেছে। এর মিষ্টি-মসলাদার স্বাদ পুরনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে। স্থানীয় দোকান থেকে শুরু করে বড় সুপারশপেও এটি সমান চাহিদা নিয়ে বিক্রি হয়।
বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে খাওয়ার জন্য একদম আদর্শ
আধুনিকতার চ্যালেঞ্জ
বেলা বিস্কুটের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে এখন বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে। দ্রুত উৎপাদনের চাপে অনেকেই রেসিপি পরিবর্তন করছেন, যার ফলে এর স্বাদ এবং গুণমানে প্রভাব পড়ছে। তবে গণি বেকারির মতো কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে বেলা বিস্কুট তৈরি করে এর মূল গুণ বজায় রাখছে।
ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব বেলা বিস্কুট শুধু একটি খাবার নয়; এটি চট্টগ্রামের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং মানুষের আত্মপরিচয়ের এক অংশ। এটি আমাদের অতীতের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় এবং বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। গণি বেকারির উত্তরসূরি আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ এহতেশাম বলেন, বেলা বিস্কুটের ইতিহাস শুধু ব্যবসার নয়, এটি আমাদের গর্ব, আমাদের ঐতিহ্য।
চট্টগ্রামের সোনালি অধ্যায় বেলা বিস্কুট আজও চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের একটি অমূল্য রতœ হয়ে আছে। এটি শুধু একটি খাবার নয়, এটি চট্টগ্রামের মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সোনালি অধ্যায়ের মতো রেখে যাবে।
চট্টগ্রামের বেলা বিস্কুট শুধু একটি খাদ্য নয়, এটি এই শহরের গর্ব এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। এর ইতিহাস, স্বাদ, এবং নির্মাণ প্রক্রিয়া সবকিছুই এটিকে একটি বিশেষ খাবারে পরিণত করেছে। আজকের প্রজন্মের উচিত এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া।
দুই শতাধিক দুস্থ পরিবারে জমিয়ত মহাসচিবের রমজান উপহার
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
|
দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করছেন মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, ছবি: সংগৃহীত
জাতীয়
স্বামীহারা রহিমা বেগমের অভাবের সংসার। গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালান। রমজানের জন্য আলাদা কিছু কেনার সুযোগ নেই। এমনই পরিস্থিতিতে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর পক্ষ থেকে পেলেন একটি খাবারের প্যাকেট। প্যাকেটটি পেয়ে আনন্দে আত্মহারা রহিমা কেঁদে ফেলেন। রহিমা বেগমের নীলফামারীর ডোমার উপজেলায়।
প্রতিবারের মতো মাহে রমজানকে সামনে রেখে মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর ছোট ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলামের অর্থায়নে এবারও দুস্থদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। উপজেলা জমিয়তের নেতাকর্মীদের ব্যবস্থাপনায় বিতরণকৃত একেকটি প্যাকেটে ১৩ প্রকারের খাদ্যসামগ্রী ছিল। দুস্থ পরিবারের মাঝে এসব প্যাকেট বিতরণ করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার মহিলা ডিগ্রী কলেজ মাঠে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বাছাইকৃত ২ শতাধিক দুস্থ পরিবারের মাঝে রমজানের খাদ্য উপহার বিতরণ করা হয়।
প্রত্যেক প্যাকেটে ছিল ৭ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি আটা, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি চিনি, ১ কেজি মসূর ডাল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি সেমাই, আধা কেজি মুড়ি, ১ লিটার সয়াবিন তেল, গুড়া দুধ ৭৫ গ্রাম ও খেজুর ২৫০ গ্রাম।
খাবারের প্যাকেট পাওয়া ষাটোর্ধ্ব আবদুল খালেক বলেন, ‘মাওলানা সাহেব (মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী) নিয়মিত আমাদের খোঁজ-খবর নেন, বিভিন্ন প্রয়োজনে তাকে কাছে পাই। তিনি আমাদের কাছের মানুষ। এলাকার মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। শীতের সময় গরম কাপড় দেন, পানির কষ্ট লাঘবে টিউবওয়েল করে দিছেন।’
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, আর্ত মানবতার সেবা ইবাদতের অংশ। নিজ এলাকার জন্য কিছু করতে পারা অবশ্যই আনন্দের। এলাকার মানুষদের ভালোবাসা থেকেই কিছু করার চেষ্টা করেছি। এলাকার গরীব-দুঃখীরা নানাভাবেই উপকার চায়। আমি সাধ্যমতো তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। রমজান উপহার বিতরণ সেই চেষ্টারই অংশ।