কাজেই আসছে না ১৫ কোটি টাকার দুই সেতু

  • উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃক ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় প্রায় ১৫ কোটি ব্যয় করে দুটি সেতু নির্মাণ করেছিল। কিন্তু দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় মূল্যবান দুটি সেতু জনগণের কাজে লাগছে না। সেতুর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলে না। প্রায় দুই বছর ধরে দুটি সেতু নিশ্চল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একটি সেতু নির্মিত হয়েছে নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের কালীগঞ্জ বাজারের কাছে নরসুন্দা নদীর ওপর। আগে যেখানে বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন নদী পাড় হতেন। সেখানে সাত কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুর ওপর দিয়ে কোনো যানবাহন চলে না। তাই স্থানীয় লোকজন সেতুর ওপর কয়েকটি টঙ দোকান বসিয়েছেন। অপর সেতুটি নির্মিত হয়েছে একই ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের সুকাইজুড়ি নদীর ওপর। সেটিতেও সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়নি। ফলে মূল্যবান দুটি সেতুই বর্তমানে অব্যবহৃত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে গেলে সেতু এলাকার কাছের বাসিন্দা মো. আবদুল কাইয়ুম জানান, আশেপাশের ১০টি গ্রামের মানুষ বাঁশের সাঁকো বা খেয়া নৌকা দিয়ে সুকাইজুড়ি নদী পাড় হতেন। নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করায় মানুষের সেই দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। এই সেতুর দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় কোনো যানবাহন চলাচল করে না। তবে সেতুর আশেপাশের বাসিন্দারা হেঁটে সেতুটি পার হন।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর বলেন, সুকাইজুড়ি নদীর ওপর সেতু নির্মিত হবে তা কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা কখনও ভাবতে পারেন নি। বিগত সরকারের আমলে এখানে সেতু নির্মাণ হলেও তা আমাদের কোনো কাজে লাগছে না।

এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, দাসপাড়া সেতুর পূর্বদিকে নান্দাইল উপজেলার প্রাচীন ব্যবসা কেন্দ্র কালীগঞ্জ বাজার। ওই বাজারে উপজেলার একমাত্র অগ্রণী ব্যাংকের শাখা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানে।

বিজ্ঞাপন

কালীগঞ্জ বাজার থেকে একটি পাকা রাস্তা মুশুলি চৌরাস্তা হয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে গিয়ে মিশেছে।

অন্যদিকে দাসপাড়া সেতুর পশ্চিম পাশে আগ-দরিল্লা গ্রামের ভেতর দিয়ে অন্য একটি রাস্তা নান্দাইল-তাড়াইল সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে নান্দাইল উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে রাজগাতী, মুশুলি, গাংগাইল ও চণ্ডীপাশা।

রাজগাতী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলীম উদ্দিন বলেন, সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মিত হলে এলাকার কৃষক তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজেই যে কোনো হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন। হাজারো লোক সহজে যোগাযোগ করতে পারতেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দাসপাড়া সেতুর দুই পাশে সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি ফেলা হয়েছিল। গত দুটি বর্ষায় বৃষ্টির পানির তোড়ে বেশিরভাগ মাটি ধসে সুকাইজুড়ি নদীতে নেমে পড়েছে। সম্ভাব্য সড়ক নির্মাণের জায়গায় বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটি খুঁটি পড়েছে। সড়ক নির্মাণ করতে হলে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোও সরাতে হবে।

অন্যদিকে নান্দাইল উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারের নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি অলস দাঁড়িয়ে রয়েছে। নরসুন্দা নদীপথ ঠিক রাখার জন্য সেতুটি বাজারের সমতল ভূমি থেকে অন্ততপক্ষে ১০ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে। এত বেশি উচ্চতার সেতুতে উঠার জন্য সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা নিয়ে বেঁধেছে বিপত্তি।

বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই সেতুর দুপাশে সড়ক নির্মাণ করতে হলে জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। কালীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. আতাউর রহমান জানান, সেতুর পূর্বপাড়ে বাহাদুরপুর, চংভাদেরা, নরেন্দ্রপুর, টেকপাড়াসহ ১০-১২টি গ্রাম অবস্থিত। পশ্চিমপাড়ে এ অঞ্চলের বড় ব্যবসা কেন্দ্র কালীগঞ্জ বাজার। বুঝতেই পারছেন সেতুটি কতো প্রয়োজন।

দুটি সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয়ে (এলজিইডি) গিয়ে প্রকৌশলী তৌহিদ আহমেদ জানান, কালীগঞ্জ বাজারের কাছে নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ রোড) নির্মাণ করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ের ডিজাইন ইউনিট সড়কের নকশা ও প্রাক্কলন প্রণয়ন করে দিয়েছে। সেটি প্রকল্প পরিচলকের (পিডি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে দাসপাড়া গ্রামের সুকাইজুড়ি নদীর ওপর নির্মিত সেতুর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের একটি সংশোধিত প্রাক্কলন (রিভাইজ এস্টিমেট) প্রকল্প পরিচালকের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসার পর দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।