কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক। এই সড়কটি এখন যাত্রী ও চালকদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। দেশের ব্যস্ততম এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে যাত্রীদের কাছে যেন, বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে! আর এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে যানবাহনে আসা-যাওয়া করেন।
সরেজমিনে ঘুরে গেছে, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক মহাসড়কটির অনেক স্থানেই পিচ ঢালাই আর ইট-পাথর উঠে অসংখ্য খানাখন্দ আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন আগ থেকেই চলছে সড়কটির। বর্তমানে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যেকোন সুস্থ মানুষ এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলে অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
এদিকে, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে ফোরলেনের কাজও চলছে শম্ভুক গতিতে। এভাবে ধীর গতিতে সড়কটির কাজ চলায় ক্ষুব্ধ সবাই। সবার একই কথা, এই মহাসড়কের কাজের এমন কচ্ছপগতির কারণ কি? আর কবেই-বা শেষ হবে মহাসড়কের চার লেনের কাজ। আর কবে কমবে মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার সূত্র জানায়, কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে ফোরলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষীপুর জেলাসহ সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া কাজ এই ফোরলেনের কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বর্তমানে যেভাবে ধীরগতিতে কাজ চলছে, তা দেখে যেকেউই বলবে ২০২১ সালেও এই কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ১৭০ কোটি টাকা। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কাজ চললেও লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকার কাজও এখনো শুরু হয়নি।
সওজ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও এর এক বছর পর লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে। জেলার লাকসাম দৌলতগঞ্জ বাজার বাইপাস ও লালমাই উপজেলার বাগমারা বাজার এলাকায় এখনো জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। আর এই দুই বাজারে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়ছে। আর সড়কের বেহাল অবস্থার কারনে প্রায়ই সড়কটিতে যানবাহন বিকল হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।
এদিকে, লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত ছাড়াও সড়কটিও অন্যান্য অংশগুলোর বিভিন্ন স্থানের কাজও চলছে অনেকটা শম্ভুক গতিতে। আর ধুলাবালির জন্য সড়কটি দিয়ে চলাফেরাও এখন দায় হয়ে পড়েছে। এছাড়া ভাঙ্গা রাস্তার কারণে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগতো রয়েছেই।
ওই রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন গণপরিবহনের অন্তত ১০ জন চালক জানান, এই সড়কটি দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রতিদিন কয়েক হাজার দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। তাই সকলের ভোগান্তি রোধে দ্রুত ফোরলেনের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি। আর ফোরলেনের কাজ শেষ করার আগে সড়কের সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী রাখারও দাবি করছি আমরা।
কুমিল্লা-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচলকারী উপকূল বাস সার্ভিসের পরিচালক কবির আহমেদ জানান, ভাঙ্গা রাস্তার কারণে প্রতিদিন গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। মালিকরা যা রোজগার করে, তা গাড়ি মেরামতেই চলে যায়। ফোরলেনের কাজ যেই ধীরগতি চলছে, তাতে কবে মানুষের এই দুর্ভোগ শেষ হবে জানি না।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মো. আহাদ উল্লাহ বলেন, কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক ফোরলেন প্রকল্পের লাকসাম থেকে লালমাই পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকার টেন্ডার হয়েছে। এখন ভূমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলমান।
তিনি জানান, আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারবো বলে আশা করছি। এই কাজগুলো শেষ হলে আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো সড়কের কাজও শেষ করতে পারবো।