শীর্ষ সন্ত্রাসী হেজাজ বিন আলম ওরফে এজাজ (৩৪) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ইফতারের সময়ে তিনি মারা গেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের বাবা শাহ আলম এবং ঢামেক পুলিশ ফাড়ির উনচার্জ মো. ফারুক। ঢামেক হাসপাতলে নিহত এজাজের ডায়ালাইসিস চলছিল।
এর আগে গত সোমবার মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এজাজকে দুজন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এজাজকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে ডাকাতি চেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে আদালতে পাঠায়। আদালতে মামলার যথাযথ তথ্য প্রমাণ করতে না পারায় জামিন পেয়ে যান এজাজ। এর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
বাবা শাহ আলম জানান, শুক্রবার (১৪ মার্চ) রাতে ডিবি পুলিশ তাকে জামিনে থাকা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে ছয়তলায় ৬০১ নম্বর ওয়ার্ডে তিনি ভর্তি ছিলেন।
জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী এজাজ মারা যাওয়ার পরেই তারা পরিবারের লোকজনেরা জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ নিয়ে যায়। তবে এব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ওরফে ক্যাপ্টেন ইমনের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হেজাজ ওরফে এজাজকে শুক্রবার মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার করে ডিবি-ওয়ারি বিভাগ। পরে মিন্টু রোডে ডিবির প্রধান কার্যালয়ে এজাজ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডিবি পুলিশ তাকে ঢামেক হাসপাতলে ভর্তি করান। সেখানে শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের লোকজন এজাজকে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা-ওয়ারী বিভাগের (ওয়ারী জোনাল টিম) অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে এখন ব্যস্ত আছি। তবে কথা বলবো। এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।’’
এর আগে গত ১০ মার্চ (সোমবার) রাজধানীর রায়ের বাজার এলাকা থেকে এজাজ ওরফে হেজাজকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। পরদিন মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বিকালে তাকে মোহাম্মদপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এরপর বুধবার আদালতের মাধ্যমে তিনি জামিয়ে বেরিয়ে আসেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন কারাভোগের পর গত ১৫ আগস্ট শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম, পিচ্চি হেলাল ও ইমনের সঙ্গে জামিনে মুক্তি পান এজাজ। মুক্তির পর থেকেই তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলেন। কিছুদিন আগে এলিফ্যান্ট রোডে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও কোপানোর ঘটনার মূল হোতা ছিলেন এজাজ। এছাড়া মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও কলাবাগান এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন তিনি।
সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও পিচ্চি হেলাল বর্তমানে পলাতক থাকায়, তাদের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্যাং এজাজের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল। এলাকাবাসীর তথ্য অনুযায়ী, এজাজের নেতৃত্বে ১২০ থেকে ১৫০ জনের একটি সন্ত্রাসী চক্র সক্রিয় রয়েছে।
এজাজের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ ১২ থেকে ১৫টি মামলা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।