ভোলা জেলার লালমোহনে অবৈধভাবে বাগদা চিংড়ির রেনু পোনা পাচারের অভিযোগ উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। গজারিয়া খালগোড়া ঘাট হয়ে রাতের আঁধারে ট্রলারে করে এসব রেণু পোনা পাচার হচ্ছে খুলনার দিকে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অন্তত ৪৩৩ ব্যারেল রেণু পোনা পাচার হয়েছে।
লালমোহন, চরফ্যাশন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই পাচার চক্র। এর নেতৃত্বে রয়েছে বোরহানউদ্দিন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নসু মিয়া, যার তত্ত্বাবধানে বোরহানউদ্দিনের শিপন মাঝির ট্রলারে নিয়মিত রেণু পোনা পাচার হয়। লালমোহনে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে মামুন ও মতিন নামের দুই ব্যক্তি, যারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পাচারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
চক্রটি প্রথমে অবৈধ বিহুন্দি জাল দিয়ে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী থেকে বাগদা রেণু পোনা সংগ্রহ করে। এরপর প্লাস্টিকের ব্যারেলে করে পিকআপ ভ্যানে করে গজারিয়া খালগোড়া ঘাটে পৌঁছানো হয়। গভীর রাতে নসু মিয়ার নিয়োজিত লোকজন ট্রলারে করে এসব রেণু পোনা দশমিনা ও কালাইয়া হয়ে খুলনায় পাচার করে। প্রতি ট্রিপে কমপক্ষে ২০ ব্যারেল রেণু পোনা পাচার করা হয়।
প্রতি ব্যারেল পাচারের জন্য গজারিয়ার নিয়ন্ত্রকরা ৩০০ টাকা করে নেন। শুধু জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০০ টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পাচার অব্যাহত রয়েছে।
একটি চিংড়ির রেণু পোনা ধরতে গিয়ে অন্যান্য ৯ থেকে ১২টি প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি ধ্বংস হচ্ছে। ফলে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অন্যান্য মাছের স্বাভাবিক প্রজনন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে সরকার বাগদা ও গলদা চিংড়ির রেণু পোনা আহরণ ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
পূর্বেও মৎস্য বিভাগের অভিযান চালিয়ে ২২টি ব্যারেল রেণু পোনা জব্দ ও দুইজনকে জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও পাচার বন্ধ হয়নি। বর্তমানে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে চক্রটি আগের চেয়ে আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানালেও এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আলী আহমেদ আখন্দ বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য এলে অভিযান চালানো হবে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সহায়তায় বছরের পর বছর ধরে এই পাচার কার্যক্রম চলমান।