বগুড়ায় চার বছরের শিশু মাহাদী হাসানের বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যার কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে জনগণ তহমিনা নামের এক নারীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তহমিনা শনিবার রাতের ফ্লাইটে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই শুক্রবার সকালে তাকে জনগণ আটক করে পুলিশে দেয়।
এর আগে, গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সকালে ওই শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।
বগুড়া শহরের নিশিন্দারা ধমকপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলামের ছেলে মাহাদী হাসান। গত বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার পর থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল। শুক্রবার ভোরে প্রতিবেশী তহমিনার ঘরের পিছন থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার হয়। নিখোঁজ হওয়ার আগে শিশুটিকে তহমিনার সাথে দেখা গেছে। এ কারণে স্থানীয় জনগণ তহমিনাকে আটক করে। পর তার ঘর তল্মরদেহি করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করে।
এদিকে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন এনজিও থেকে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে গত তিনমাস ধরে নিশিন্দারা ধমকপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তহমিনা। শনিবার রাতের ফ্লাইটে তহমিনা মালয়েশিয়া চলে যেতেন। তহমিনার বাবার বাড়ি শিবগঞ্জ উপজেলার জান গ্রামে। প্রথম স্বামী আনিস মন্ডলের সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বিয়ে করেন বগুড়া সদরে ঘোলাগাড়ি গ্রামের আলিফ মিয়াকে।
তহমিনার মা আক্তার বানু জানান, কয়েক বছর আগে তহমিনা বিদেশ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নেয়। বগুড়া সদরের নামুজা এলাকার এক ব্যক্তিকে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা দিলেও বিদেশ যেতে পারে না। এমনকি সেই টাকাও ফেরত পায় না। এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি দিতে না পেরে স্বামী আলীফের সাথে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে দুই বছর গার্মেন্টসে কাজ করে বগুড়ায় ফিরে আসে। আলিফ গ্রামের বাড়িতে উঠলেও তহমিনা নিশিন্দারা ধমক পাড়ায় আলিফের বোনের সহযোগিতায় সায়েদ আলীর বাড়ির একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। সেখানে মাঝে মধ্যে আলিফ যাতায়াত করতেন এবং সংসার খরচ চালাতো। নিহত শিশু মাহাদীর মা রুবি বেগম আলিফের খালাত বোন।
তহমিনার মা আরো জানান, তার এক ছেলে মালয়েশিয়া থাকে। সেই ছেলে তহমিনাকে টুরিস্ট ভিসায় সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভিসা পাঠায়। শনিবার রাতের ফ্লাইটে তহমিনার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার তহমিনা ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু তার আগে শিশু মাহাদীকে হত্যার অভিযোগে জনগণ আটকের পর মারপিট করে পুলিশ দেয়।
তিনি বলেন, তহমিনা হত্যার সাথে জড়িত না। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। অন্য কেউ শিশুটিকে হত্যা করে তহমিনাকে ফাঁসিয়েছে। তহমিনা মালয়েশিয়া গিয়ে কাজ করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার কথা ছিল।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মঈনুদ্দিন বলেন, শিশু মাহাদী হত্যা এখনও রহস্যজনক। গ্রেফতার তহমিনা কারাগারে রয়েছে। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। কিন্তু জনগণের মারপিটে অসুস্থ অবস্থায় রয়েছে। কিছুটা সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নেয়া হবে।
ওসি আরও বলেন, পুলিশ বিভিন্ন কৌশলে কাজ করছে। মরদেহ উদ্ধারের পর দিন ভাড়া বাসার ছাদে শিশুটির স্যান্ডেল পাওয়া গেছে।