বলিউডে প্রতিবারের মতো ২০১৯ সাল ছিল ঘটনাবহুল। ব্লকবাস্টার ও হিট ছবির পাশাপাশি এ বছর অনেক বিতর্কিত ঘটনা দেখা গেছে।
‘মনিকর্নিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’র পরিচালক কৃষ ও অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতের মধ্যে বাকযুদ্ধ হয়। মূল পরিচালক হিসেবে কার নাম থাকবে তা নিয়ে কলহে জড়ান তারা। এ কারণে ছবিটি থেকে শেষমেষ বেরিয়ে যান কৃষ। পরে শুটিং শেষ করেন কঙ্গনা। একইভাবে সনু সুদ ছবিটি থেকে সরে আসেন। এছাড়া কাশিবাঈ চরিত্রের অভিনেত্রী মিষ্টি চক্রবর্তী জানান, তার উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’ মুক্তির সময় এক সাংবাদিকের সঙ্গে বাকযুদ্ধে জড়ান কঙ্গনা। এরপর তার বোন রঙ্গোলি চান্ডেল সংবাদমাধ্যম নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন টুইটারে। এ কারণে ভারতের বিনোদন সাংবাদিকরা কঙ্গনাকে বয়কটের ঘোষণা দেয়।
তেলুগু হিট ‘অর্জুন রেড্ডি’র হিন্দি রিমেক ‘কবির সিং’ রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে। এ বছর চমকে দেওয়া ব্লকবাস্টার হয়েছে ছবিটি। তবে অতিরঞ্জিত নারীবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। পরিচালক সন্দীপ রেড্ডি ভাঙ্গা মন্তব্য করেন, প্রেমিকাকে চড় দেওয়ার স্বাধীনতা না থাকলে তাতে ভালোবাসা থাকে না। এরপর বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে।
শুটিং শুরুর ঠিক কয়েকদিন আগে বাক্সবন্দি হয়ে গেছে সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘ইনশাল্লাহ’। সালমান খান ও আলিয়া ভাটকে নিয়ে এটি নির্মাণের কথা ছিল তার। কিন্তু সৃজনশীল ভাবনা নিয়ে পরিচালকের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে সল্লু ছবিটি থেকে বেরিয়ে গেলে কাজ থমকে যায়।
অক্ষয় কুমারের কানাডিয়ান নাগরিকত্ব থাকায় লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। অন্য দেশের পাসপোর্ট রাখা নিয়ে মুখ না খোলায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। শেষমেষ এ মাসের শুরুতে ভারতীয় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে বাধ্য হতে হয়েছে তাকে।
বিবেক ওবেরয় অভিনীত ‘পিএম নরেন্দ্র মোদি’ এ বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চারদিন আগে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। পরে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হলেও এর একদিন আগে ভারতের নির্বাচন কমিশন সব ধরনের বায়োপিক নিষিদ্ধ করে। শেষমেষ এটি মুক্তি পায় নির্বাচনের ফল ঘোষণার একদিন আগে।
আশুতোষ গোয়াড়িকরের ‘পানিপথ’ মুক্তির দ্বিতীয় দিন রাজস্থানে বাধার সম্মুখীন হয়। অভিযোগ ছিল, মহারাজ সুরজমালকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা ঐতিহাসিকভাবে ভুল। এরপর রাজ্যটির অনেক স্থানে ছবিটি নামিয়ে দেওয়া হয়। উপায় না দেখে নির্মাতা আশুতোষ ১১ মিনিটের বিতর্কিত বিষয় বাদ দিয়েছেন।
টেকো চরিত্র নিয়ে নির্মিত দুই ছবি ‘উজড়া চামান’ ও ‘বালা’ টানা দুই সপ্তাহে মুক্তি পেয়েছে। যদিও একই দিনে ছবি দুটির নির্মাতারা প্রেক্ষাগৃহে আসার ঘোষণা দেওয়ায় আলোচনার জন্ম হয়। শেষ পর্যন্ত বিতর্ক গড়ায় আদালত পর্যন্ত।
‘সান্ড কি আঁখ’ ও ‘বালা’ দর্শকদের মন জয় করেছে। কিন্তু এগুলোর অভিনয়শিল্পী নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ভূমি পেডনেকর ও তাপসী পান্নুকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধার চরিত্রে নেওয়ায় নির্মাতার সমালোচনা করেন অনেকে। একইভাবে ‘বালা’য় মুখে কালি মেখে কালো তরুণীর চরিত্রে প্রকৃতি কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেত্রী না নিয়ে ভূমিকে দিয়ে কাজ করানোর কারণে বিতর্ক ছড়ায়।
বছরের মাঝামাঝি চিরতরে অভিনয় ছাড়ার ঘোষণা দেন জায়রা ওয়াসিম। ধর্মীয় কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনার জন্ম দেন তিনি।
টিভি অনুষ্ঠান ‘আপ কি আদালত’-এ গোবিন্দ দাবি করেন, জেমস ক্যামেরনের ‘অ্যাভাটার’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। এ কারণে ট্রলের শিকার হন তিনি। তার আরও দাবি ছিল, ‘অ্যাভাটার’ নামটি তারই দেওয়া। এসব মন্তব্য ভাইরাল হযে গেলে মিথ্যেবাদী তকমা দেওয়া হয় তাকে। যদিও বলিউডের কয়েকজন তারকা জানান, সত্যিই ছবিটিতে কাজের প্রস্তাব পেয়েছিলেন গোবিন্দ।
বর্ষসেরা ভাইরাল তারকা বলা যায় রানু মণ্ডলকে। পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট স্টেশনে লতা মঙ্গেশকরের গান গেয়ে নজরে পড়েন তিনি। এরপর হিমেশ রেশামিয়ার সুরে গান গেয়েছেন। তবে সেলফি তুলতে চাওয়া ভক্তদের সঙ্গে খ্যাতির ভাব দেখানোর কারণে সমালোচনা হজম করতে হয়েছে তাকে।
নির্মাতা করণ জোহরের টক শো ‘কফি উইথ করণ’-এ ক্রিকেটার হার্ডিক পান্ডিয়া ও কেএল রাহুল নারীবিদ্বেষী ও আপত্তিকর মন্তব্য করলে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, করণের একটি পার্টির ভিডিওতে ভিকি কৌশলসহ কয়েকজন তারকার মুখ দেখে মাদকাসক্ত মন্তব্য করেছে অনেকে। যদিও করণ তা অস্বীকার করেন।
ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলায় নিহতের ঘটনায় বলিউডের ছবি পাকিস্তানে মুক্তি দেওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি ভারতে পাকিস্তানি কণ্ঠশিল্পীরা নিষিদ্ধ হন। ‘দাবাং থ্রি’ ছবির ‘ন্যায়না লাড়ে’ গানে রাহাত ফতেহ আলি খানের কণ্ঠ বাদ দিয়ে জাভেদ আলিকে নেন সালমান খান। পাকিস্তানও পাল্টা সিদ্ধান্তে ভারতীয় ছবি নিষিদ্ধ করে দেয়। পুলওয়ামা হামলা নিয়ে মন্তব্যের জেরে আরেক টিভি অনুষ্ঠান ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ থেকে নভজোত সিং সিধুকে বাদ দিয়ে অর্চনা পূরাণ সিংকে নেওয়া হয়।
‘ইন্ডিয়ান আইডল’-এ একজন প্রতিযোগী আচমকা বিচারক নেহা কাক্কারের গালে চুমু দেন। মিটু আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংগীত প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানটি থেকে সরে যেতে বাধ্য হন আনু মালিক। বিয়ের পর স্ত্রীকে ধর্ষণ বিষয়ক রসিকতার সংলাপ নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় ‘পতি পত্নি অউর ও’ ছবি থেকে তা বাদ দেওয়া হয়।