রুটে পরিবর্তন, ভোলা-বরিশাল-ঢাকা গ্যাস পাইপলাইনের সিদ্ধান্ত

বিদ্যুৎ-জ্বালানী, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2025-03-06 10:22:01

বদলে যাচ্ছে ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস পাইপ লাইনের রুট। ভোলা-বরিশাল অংশ অপরিবর্তিত রেখে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান রেজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেছেন, বরিশাল-খুলনা পাইপলাইনও হবে, তবে প্রথম ধাপে ভোলা-বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোলা-বরিশাল পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে, বরিশাল-ঢাকা পাইপলাইনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য বুধবার (৫ মার্চ) ফাইল স্বাক্ষর করেছি।

সিলেট অঞ্চলের পর দ্বীপ জেলা ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এখন পর্যন্ত যতগুলো কূপ খনন করা হয়েছে সবগুলোতেই গ্যাসের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোলা ইস্ট থেকে ভোলা নর্থের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার সেখানে গ্যাস পাওয়া গেছে। হাতিয়া ট্র্যাপে যতগুলো কূপ করা হয়েছে, কোনটি মিস হয়নি, মুলাদি, বেগমগঞ্জ, সুন্দলপুর, ভোলা, সাঙ্গু সব জায়গায় গ্যাস পাওয়া গেছে। বিবিয়ানার পর এটা হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বড় রিজার্ভ। ইতোমধ্যেই ভোলায় দু’টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কৃত হয়েছে তাতে প্রায় ৮ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস মজুদ আশা করা হচ্ছে।

গ্যাসফিল্ড দু’টিতে মোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে। যা দিয়ে দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। ৯ কূপের মধ্যে ৫টি এখনই গ্যাস উৎপাদনে সক্ষম রয়েছে যেগুলো থেকে দৈনিক ১৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া সম্ভব। অপর ৪টি কূপের মধ্যে ১টির পাইপলাইন এবং ৩টি কূপের প্রসেস প্লান্ট রেডি হচ্ছে। ভোলায় আরও ১০টি কূপ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাপেক্স।

ওই এলাকায় গ্যাসের চাহিদা না থাকায় দৈনিক মাত্র ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে, আবার পাইপলাইন না থাকায় জাতীয় গ্রিডে দেওয়া যাচ্ছে না। বিগত সরকার সিএনজি আকারে ৫ মিলিয়ন আনার জন্য একটি কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। কোম্পানিটি দৈনিক সর্বোচ্চ ৩ মিলিয়ন পর‌্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে গাজীপুর এলাকার কয়েকটি কারখানায়।

অন্যদিকে, ভোলা থেকে দৈনিক ৮০ মিলিয়ন গ্যাস এলএনজি আকারে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনার কথা নিশ্চিত করেছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তবে বিষয়টি কতটা অর্থনৈতিক হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে খুলনা নিতে গেলে ১৫০ কিলোমিটার পাইপ লাইন দরকার। বলা যায় কয়েক দশক ধরেই পাইপলাইন নিয়ে আলোচনা চলে আসছে। ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচের প্রাক্কলন করা হয়। গ্যাস মজুদ বেশি না থাকলে পাইপলাইনের খরচ উঠবে কিভাবে, অর্থায়নে নিশ্চয়তা চাইবে ঋণদাতারা। ২০০৪ সালে পাইপলাইন নির্মাণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সেই গ্যারান্টি চাইলে প্রকল্প ভেস্তে যায় তখন।

বলা যায়, অর্থায়ন ইস্যু নিয়েই বিষয়টি ঝুলেছিল এতদিন। ৭ হাজার কোটি টাকার জন্য যখন পাইপলাইন আটকা, তখন এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে ৬৪৯ কোটি টাকা (আগস্টের দরপত্র)। যা দেশের ১ দিনের চাহিদার (৩০০০ মিলিয়ন) সমান। যার বিপরীতে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করা হচ্ছে এফএসআরইউ ভাড়া হিসেবে। চলতি বছরে ১১৫ কার্গো এলএনজি আমদানি করতে চায় পেট্রোবাংলা।

দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এতে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে উৎপাদন। এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেতো এখন ১৯০০ মিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। সবচেয়ে শঙ্কার হচ্ছে দেশের বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানার মজুদ ফুরিয়ে আসছে। দেশীয় উৎসের ৫০ শতাংশ যোগান আসছে ওই গ্যাস ফিল্ডটি থেকে। এক সময় ১৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হলেও ৪ মার্চ পাওয়া গেছে মাত্র ৯৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৬ সাল নাগাদ গ্যাসক্ষেত্রটির মজুদ শেষ হয়ে যেতে পারে। শঙ্কা সত্যি হলে রাজধানী ও তার পাশ্ববর্তী শিল্পাঞ্চলগুলোতে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।

রাজধানী শহর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টঙ্গী শিল্প এলাকায় এখনই গ্যাস সংকট জটিল আকার ধারণ করেছে। অদূর ভবিষ্যতে বিবিয়ানার উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। সে কারণে শিল্পাঞ্চলগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য পরিকলল্পনা পরিবর্তন করে বরিশাল-ঢাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া খুব কম বিকল্পই পেট্রোবাংলার হাতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ১১৩ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে ৯৯টির মতো। এর মাধ্যমে ২৯টি গ্যাসফিল্ড আবিস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। মোবারকপুর ও কশবার মতো কয়েকটি ফিল্ডে গ্যাসের উপস্থিতি পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয় নি। বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়। সঙ্গত কারণে দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর